আত্মাভিমানী হলো অহংকারী শহুরে নারীর প্রেমকাহিনী…
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোৎসবে এসে সুভাসের সাফল্যে তার মা বাবা আনন্দে আপ্লুত। আনন্দাশ্রু মুছে তার বাজু ধরে শান্তগম্ভীর কণ্ঠে বাবা বললেন, “আজ তুমি স্বাবলম্বী পুরুষ হয়েছ।”
“খুশিতে ডগমগ অথবা আহ্লাদে আটখানা হতে চাই না। ব্যস্ত শহরে বসবাস করে আমি বাস্তবিক হয়েছি। নিজে কম খেয়ে কমদামি কাপড় পরে, আমাকে ভালো খাইয়ে ভালো কাপড় পরিয়ে ভরণপোষণ করেছেন। এখন থেকে আমি কম খেয়ে কমদামি কাপড় পরে আপনাদের সেবাযত্ন করব।” বলে সুভাস হাসার চেষ্টা করে। তার পিঠে হাত বুলিয়ে মৃদু হেসে বাবা বললেন, “জীবে জীবনীশক্তি দিয়ে আল্লাহ জরায়ূকে জীবন্ত রাখেন। মাতৃগর্ভে অম্লজান নেই তবুও আমরা নশ্বর। দিনে দিনে বেড়ে আমরা আকাশ ছুঁতে পারি না এবং একেশ্বরবাদী হওয়া সস্ত্বেও আমরা ভিন্নমতপোষণকারী বিধায় কেউ যাব স্বর্গে কেউ যাব নরকে।”
সুভাস বিচলিত হয়ে বলল, “খুশিতে আত্মহারা হয়ে লোকজন আল্লাহকে ভুলে বগল বাজিয়ে ফাঁড়ায় পড়ে। আপনি অষ্টপ্রহর অন্তর্যামীকে অন্তরে রাখেন। এই জন্য ভক্তির সাথে আপনাকে শ্রদ্ধা করি এবং পদধূলি গায়ে মেখে ধন্য হয়েছি।”
ডান হাত তার কাঁধে রেখে শান্তকণ্ঠে বাবা বললেন, “বৌমাকে দেখতে পারব?”
“বাবা গো, আপনি যা বলেছেন তা বুঝতে না পেরে আমি সত্যি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি।” বলে সুভাস কপট হাসলে বাবা অবাককণ্ঠে বললেন, “এত বছরে বাছবিচার করে তোর মনে কারো প্রতি মায়াটানের উদ্রেক হয়নি জেনে আমি সত্যি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি।”
“সাধ্যসাধনায় সত্যাসত্য জেনেছি, অন্তরাত্মার চেয়ে মা বাবার গুরুত্ব বেশি।” বলে সুভাস বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলে বাবা উত্তেজিত হয়ে বললেন, “ওরে বাপরে। সুভাসের মা, আমার সুভাস কী বলেছে তুমি শোনেছ?”
“কী বলেছে বুঝিয়ে বললে বোঝব। প্যাঁচকষে জোড়া-তাড়া প্যাঁচালো কথা আমি বুঝি না।”
“সুভাস বলছে, আমাদেরকে সে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসে।”
“মা বাবা সন্তানের নয়নমণি।” বলে মা মৃদু হাসলে কান্নার ভান করে সুভাস বলল, “আম্মা গো, আমি দেশে ফিরে যেতে চাই।”
“মিনতি করলেও এবার তোকে রেখে যাব না।”
“আমার আম্মার মতো এত ভালো আম্মা জগতে আর নেই।” বলে সুভাস মার কাঁধে মাথা রাখে। আর কথা না বলে বাবা বেরিয়ে ক্যাব থামান। সুভাস দরজা খুলে এবং মা বাবা উঠে বসলে সে উঠে দরজা বন্ধ করে হোটেলের ঠিকানা বলে বসে বলল, “আম্মা, পাপিয়াকে সাথে আনলেন না কেন?”
“চ্যালসি ফ্লাওয়ার শো শেষ হয়েছে তাই আসেনি। নতুন ফুলের বিচি নেওয়ার জন্য আমাকে কানে কানে বলেছে।”
“নতুন সব ফুলের বিচি আমি কিনে রেখেছি। আমার এক বন্ধু পাপিয়ার জন্য নতুন ড্রেস বানিয়েছে। ওটা দিয়ে সে প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল। আচ্ছা আম্মা, সবাই ওকে এত আদর করে কেন?” বলে সুভাস কপাল কুঁচে মা’র দিকে তাকায়।
“তা আমি জানব কেমনে? তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর।” বলে মা মৃদু হেসে বাইরে তাকান। সুভাস কিছু বলতে চাইলে বাবা চোখ পাকিয়ে বললে, “আমিও জানি না।”
সুভাস কাঁধ ঝুলিয়ে মা’র দিকে তাকালে মা চোখ পাকিয়ে বললেন, “চোপ, আর একটা কথা না।”
কথার ফাঁকে হোটেলের সামনে ক্যাব থামলে সুভাস বেরিয়ে দরজা খোলে, বাবা বেরিয়ে ভাড়া দিয়ে বললেন, “ব্রিকলেইন যেয়ে দেশি খাবার খেতে চাই। শুনেছি শুঁটকিসুরুয়া এবং বেগুনের ভর্তাও মিলে।”
সুভাস কপটহেসে বলল, “আব্বা, আজ না আরেক দিন খাব।”
“পরশু দেশে পৌঁছে গপসপ করার সময় পাড়াপড়শিকে বলতে পারব লণ্ডনি শুঁটকিসুরুয়া জবর মজা।”
“আব্বা, দেশি শুঁটকি এদেশে নিষিদ্ধ। পেটনামলে সমস্যা হবে।”
“আর কথা না বলে হোটেলে চলো, নুন মরিচ ছাড়া সিদ্ধ আলু এবং গাজর খাওয়ার জন্য ডাক্তার আমাকে উপদেশ দিয়েছিল।” বলে বাবা শিউরে ওঠেন। মা মৃদু হেসে মাথা নেড়ে বললেন, “ভিতরে চলুন রাত অনেক হয়েছে। কিছু খেলে ভালো হবে।”
“হ্যাঁ তাই করতে হবে নইলে খামোখা মাথা ঘুরাবে।” বলে বাবা হোটেলের ভিতর যান এবং রাতের খাবা খেয়ে শুয়ে পড়েন। পরের দিন প্লাইট হয় এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে বুক ভরে শ্বাস টেনে ছেড়ে সুভাস বলল, “আম্মা গো, মাতা মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষার মতো এত আপন আর কিচ্ছু জগতে নেই।
মা কপাল কুঁচ করে বললেন, “কেন বললে?”