অমানিশাত

“অমানী এবং নিশাতের ভালোবাসার গল্প”

অর্থোপার্জনে ঋণমুক্ত হওয়ার জন্য নিশাত নামের যুবক সার্কিট হাউসের ব্যস্ততম চা’র দোকানে আজ্ঞাবহের কাজে করে। সার্কিট হাউস রোডে যানজট লেগে নিবন্ধন দফতরে আদান-প্রদান প্রকট হলে, আড়াআড়িভাবে থার্মোফ্লাস্ক এবং থার্মোব্যাগ কাঁধে নিয়ে সে বেরোয়। দূর দূরান্ত থেকে যারা কার্যালয়ে আসে, গরম চা পরোটার জন্য ওরা তাকে বকশিশ দেয়। যাই হোক, জলখাবারের পালা শেষে করে থার্মোফ্লাস্ককে ঢোলের মত বাজিয়ে গুনগুন করে হাঁটছিল। হঠাৎ আকাশ ঝামরিয়ে বাজ ফেটে বিজলি চমকালে, “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলে দৌড় দেয়। তখন কীন ব্রীজের মুখে বাস থেমে দরজা খুললে নামবে কি না নামবে নিয়ে দুই বান্ধবী দোটানে পড়ে। তাদের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভার বললো… “বৃষ্টিজলে পথঘাট পিচ্ছল হয়েছে। আগপাছ করলে পা পিছলাবে। দয়া করে সাবধানে নামুন।”
“আপনাকে ধন্যবাদ?” একসাথে বলে বান্ধবীদ্বয় বাস থেকে নেমে এদিক-ওদিক তাকিয়ে এক বান্ধবী ডেকে বললো… “শাইরা চল, সার্কিট হাউসে চা সিঙারা খাব।”
“তুই খা যেয়ে, আমি এখন ঝালমুড়ি খাব।” বলে শাইরা ডানে বাঁয়ে থাকিয়ে দ্রুত রাস্তা পেরিয়ে সার্কিট হাউস পার্কে প্রবেশ করলে আকাশ ভেঙে ঝেঁপে বৃষ্টি ঝরে। যেন একেবারের বর্ষণে শহর ডুবাবে। শাইরা দ্রুত হেঁটে গাছের নিচে যায়। নিশাত তখন দু হাতে চুল ঝাড়ছিল। শাইরা কপাল কুঁচকে তাকালে, কপট হেসে নিশাত বললো… “বাজ ফেটে ঠাঠা পড়লে আমার চোখে ছানি পড়ে। বৃষ্টিপাত যেমন তেমন বজ্রপাতে মৃত্যু হয়।”
“আমাকে শুনাচ্ছ কেন, নানীর মত পাথালি কোলে লয়ে অভয় দিতে হবে নাকি?” বলে শাইরা মুখ বিকৃত করে। ওর কথায় কান না দিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দু হাতে মাথা চেপে ধরে গাছে হেলান দিয়ে বসে নিশাত বললো… “মারধর করলেও আমি এখন সার্কিট হাউসে যাব না। হঠাৎ শর্ট সার্কিট হলে আমার মাথায় ঠাঠা পড়বে।”
শাইরা :.. “ঠাঠাবাজকে সত্যি ভয় পাও নাকি?”
নিশাত :.. “আমি তাকে চিনি না। আপনি তাকে চিনেন নাকি?”
শাইরা :.. “এই একটু আগে বলেছিলে, বাজ ফেটে ঠাঠা পড়লে তোমার চোখে ছানি পড়ে।”
নিশাত :.. “ও আচ্ছা, ঠাঠা এবং বাজ দুটাকে আমি ভয় পাই। একবার সামান্যের জন্য একটা আমার মাথায় পড়েছিল। ভ্যাগিস আমি তখন ভূগর্ভে ছিলাম, পার্কে থাকলে নির্ঘাত বজ্রাহত হতাম।”
শাইরা :.. “ভূগর্ভে কী করছিলে?”
নিশাত :.. “আঁতের খবর জানার জন্য এত প্রশ্ন করছেন কেন?”
শাইরা :.. “ঠিকাছে, আর প্রশ্ন করব না।”
“আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।” বলে নিশাত ডানে বাঁয়ে উপরে নিচে তাকিয়ে কাঁধ ঝুলিয়ে বললো… “আমি এখন কী করব?”
শাইরা :.. “কী করতে চাও?”
নিশাত :.. “আপনার সম্যসা কী, বার বার প্রশ্ন করেন কেন?”
নিরুত্তর শাইরা নিচে তাকিয়ে পাথর হাতে নিয়ে গাছের গায়ে লিখতে চেয়ে নিম্নকণ্ঠে বললো… “অমানিশাত।”
“আপনি আমার নাম জানেন কেমনে?” সবিস্ময়ে বলে নিশাত কপাল কুঁচ করলে, থতমত খেয়ে শাইরা বললো… “আমি তোমার নাম জানি না।”
নিশাত :.. “সবেমাত্র আপনি আমাকে নাম ধরে ডেকেছেন।”
শাইরা :.. “তোমার নাম কী?”
নিশাত :.. “আমার নাম নিশাত।”

আরও পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

© Mohammed Abdulhaque

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s