“রহস্যময় নারীর প্রেমকাহিনী”
মানসসুন্দরী শর্মী ব্যাধিনী বেশে বনগহনে ঘোরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ অলীক পরিবেশে প্রবেশ করে কৌতূহলোদ্দীপক হয়। সূর্যাস্তের শুরুতে চাঁদের আলোয় পরিবেশ স্বপ্নীল হলে আকস্মিকভাবে বিদ্রূপাত্মক বাক্য পরিবেশে ভাসে, “ও লো শর্মী! মরি-মরি জপে লজ্জায় লাল হওয়ার জন্য জংলায় এসেছিন কেন?”
“রে কুক্কুট! নিঃসঙ্গ আসলেও তোদের একটাকে মেরেকেটে শিকে পোড়ে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট মশলাপাতি সঙে এনেছি। মনে রাখিস! তীক্ষ্ণ তির বুকে বিঁধলে হাঁকাহাঁকির পালা পলকে সাঙ্গ হবে।” দাঁত কটমট করে বলে শর্মী তন্ময় হয়ে কান পেতে ডানে বাঁয়ে তাকায়। অপ্সরা তখন মোহনসুরে গান গেয়ে হাঁটছিল…
“হিরণবরন পাখি জিয়নে মরণে হয়েছে মোর সখি, সুখিনী হওয়ার জন্য হতে চাই সখার মুখোমুখি।”
অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে বিস্ময়াবিষ্ট কণ্ঠে শর্মী বলল, “নিগূঢ় রহস্যে রূপসী হয়েছে রহস্যময়ী আর পরিবেশ হয়েছে রহস্যময়।”
এমন সময় বাতাসে বাঘের হুংকার প্রতিধ্বনিত হলে অপ্সরা পরিবেশে অদৃশ্য হয়। শর্মী চমকে ধনুতে তির সংযোগ করে চারপাশে তাকায়। কিছু দেখতে না পেয়ে হেঁকে বলল, “টাট্টু! দৌড়ে আয়।”
ডাকের সাথে সাথে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়। চিকচিকে কালো এবং তেজি আরবি-ঘোড়া সামনের ঠ্যাং তুলে হ্রেষাধ্বনি করে বশ্যত্বের প্রমাণ দিয়ে স্থির হয়ে মাথা নেড়ে কান শরীর ঝাড়ে।
“বাঘের কান্দন শোনেছিলাম।” বলে শর্মী দক্ষ আরোহীর মত লাগাম ধরে রেকাবে পা রেখে টপকি দিয়ে উঠে বসে সামনে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে কান পাতে। কিছু শুনতে না পেয়ে ধনুতে তির সংযোগ করে গায়ের জোরে টানিয়ে ছেড়ে লাগাম ধরে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, “টাট্টু! দৌড়া।”
হ্রেষাধ্বনি করে ঘোড়া মহাবেগে দৌড়ে। দু পা দিয়ে আঘাত করে বার বার ঘোড়াকে উসকানি দেয়, “টাট্টু! আরো রোষে।”
তির গাছে বিঁধলে লাগাম টেনে ঘোড়াকে থামিয়ে ঝম্পে নেমে ঘোড়ার চোখের দিকে তাকিয়ে মুখ বিকৃত করে শর্মী বলল, “ভুসি তুষ খেয়ে তুই খোদার খাশি হয়েছিস! রোষ-জোশের লেশ তোর মাঝে নেই। নিস্তেজ কোথাকার!”
হ্রেষাধ্বনি করে ঘোড়া মাথা নাড়ে। অনতিদূরে শ্বেতকায় বাঘ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গোঙাতে দেখে কোষ থেকে ভোজালি বার করে চারপাশে তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে কান পাতে। বাঘ গর্জিয়ে গোঙালে কিছু লোক আছাড়ি পিছাড়ি খেয়ে দৌড়ে পালায়।
“কাঙালের দল! ধরতে পারলে তোদেরকে আমি আচ্ছা করে ঠ্যাঙাব মনে রাখিস!” রাগান্বিতকণ্ঠে বলে শর্মী ভোজালি কোষে রেখে ঘোড়ার লাগাম ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে বলল, “আপোশে পোষ মানলে আশেপাশে থাকতে পারবে নইলে আজীবন আপসোস করবে। টাট্টু! আগ বাড়, বাগুরা ভেঙে বাঘকে মুক্ত করতে হবে। মুক্ত হয়ে অকৃতজ্ঞের মত আক্রমণ করলে কী করব?”
ঘোড়া আগপিছ করে বার বার মাথা নাড়ে।
“আমারে কামড়াতে হলে আগে তোর লেঙুর ধরতে হবে। কামড়াকামড়ি করার জন্য ল্যাংড়া এখন দাঁড়াতে পারবে না। ডরের কারণ নেই, আমিও বাঘ বানর ডরাই।” বলে শর্মী অনুপল চিন্তা করে মেনি বিড়ালকে আদর করছে এমন শব্দ করে অগ্রসর হয়। বাঘ হুংকার করলে কয়েক পা পিছিয়ে মুখ বিকৃত করে শর্মী বলল, “হুলোর নাতি শার্দূল! তুই আস্ত একটা গর্দভ।”