কাব্যরসিকা

“কবিদের কাব্যিক প্রেমকাহিনী”

অসাধ্য সাধনযোগ্য হয় সাধ্যসাধনায় এবং সাধনচাতুর্যে দুঃসাধ্য হয় সহজসাধ্য। অকষ্টকল্পনা হলো কল্পনাবিলাসের উৎস এবং অকষ্টবদ্ধ শব্দের অর্থ জানলে অত্যন্ত বিপদগ্রস্ত কেউ হবে না। বিনাচেষ্টায় কিচ্ছু হয় না। সচেষ্টরা সফল হয়। অচেষ্টরা বাতাসের জন্য হাঁসফাঁস করে। স্বভাবে কাব্যিক হলেও কাব্যিকতা সকলে পছন্দ করে না। সত্যাসত্য জেনে সৃজনী সাত্ত্বিক হয়েছে এবং সাহিত্যসাধক নানার সংস্পর্শে থেকে কাব্যকলা শিখেছে। লাবণ্যচঞ্চল পরমা সুন্দরীর চঞ্চলদৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আজো কেউ প্রেমদৃষ্টে তাকিয়ে প্রেম নিবেদন করতে পারেনি, দোরঙা গোলাপ ছুড়ে প্রেমবাণ মারাতো দূরের কথা। সাতপাঁচ ভেবে চ্যাংড়ারাও দূরত্ব বজায় রাখে। ছুটি কাটাবার জন্য দেশে আসার পর অস্বাভাবিকভাবে ভাবভঙ্গি এবং দেহভঙ্গিমা বদলেছে। পূর্বাহ্নে কাব্যের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কাব্যিক স্বভাবে শাড়ি পরে কাব্যময় ভঙ্গিমায় বাগানে হাঁটছিল। অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে নানা উচ্চকণ্ঠে বললেন, “কবিকল্পনার রূপলাবণ্যবতী, চটকদার হয়েছে ডাকের সুন্দরী।”
সৃজনী রেগে গজগজ করে দাঁত খিঁচিয়ে বললো, “বিয়ে আরেকখান করতে চাও নাকি?”
“পরিণতবয়সে বিয়ে করলে শেষ পরিণতি ভালো হবে না।” বলে নানা হেসে কুটিপাটি হলে রেগে ফোঁসে হাতে কিছু দিয়ে চোখ পাকিয়ে সৃজনী বললো, “পূর্ণতাপ্রাপ্তির জন্য মুখে বুজে ধুস্তুরী চিবাও।”
“বাপের জন্মে তোরে আর ডাকের সুন্দরী ডাকব না লো সুন্দরী।” বলে নানা দু হাত নেড়ে হাসতে থাকলে রেগেমেগে সৃজনী বললো, “বুড়ো হলেও স্বভাবদোষ যায় না। অবলার সাথে লটরপটর করা অভীকের মজ্জাগত দোষ এবং থুত্থুড়ে হলেও শিরা উপশিরায় রিপুরা হতভম্বের মত দৌড়ে। বোড়ায় বেড় দিলেও বেয়াড়া বুড়া ভড়কে না এবং বুড়োবুড়ি জড়ো হলে মজ্জায় মজ্জায় মিলে আলোকোজ্জ্বল হয়।”
“তা তো অভ‍্যাসমাফিক কার্মকাণ্ড।” বলে নানা কপট হাসলে নানি মাথা দুলিয়ে বললেন, “এটাই সাংসিদ্ধিক অথবা স্বাভাবিক।”
নানার দিকে তাকিয়ে সৃজনী বললো, “বেশবিন্যাসে ভাব এমন, হাতে যেন স্বর্গের চাবি, যখন ইচ্ছা তখন প্রবেশ করতে পারবে। ঠিকাছে, তাই যেন হয়। শুধু এতটকু বলব, একটিবার নিজের ছায়াকে জিজ্ঞেস করো, স্বর্গোপযোগী কি হয়েছ? ছায়া নিরুত্তর থাকার কারণ, স্রষ্টা সরাসরি সৃষ্টির সাথে কথা বলেন না। কষ্টেসৃষ্টে স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করলে স্বর্গ হবে গন্তব্য।”
নানা মৃদুহেসে বললেন, “পাগলের সাথে পাগলামি করলে পাগলে ধাওয়া করে। সকল পাগল স্বর্গে যাবে না, বেশিরভাগ পাগল নামাজ কাজা করে। ছায়াবাজি দেখার জন্য ছায়াতরুর ছায়ে বসে ছায়ার নিগূঢ় রহস্য জেনেছি, ছায়া কখনো বাসি হয় না।”
“আজ নিশ্চয় অপচ্ছায়ার ভর পড়েছে অথবা অশরীরীর ছায়া মাড়িয়েছেন।”
“ভক্তিবলে অন্তর্ভুক্ত হলেও ভুক্তভোগী ভক্তরা বিভক্ত করে, কাব্যের ভর উঠলে লবেজান কবির ভোগের প্রবৃত্তি বাড়ে।”
“খামোখা চিন্তা করে মন সংশয়গ্রস্ত হয়েছে। মাথার কী যে অবস্থা মুখে বলতে পারব না, স্বস্তির সাথে আশ্বস্ত হওয়ার জন্য আমি আমার কামরায় যাচ্ছি।” বলে সৃজনী গায়ের জোরে হেঁটে যায়। নানা ডান হাত উঁচালে নানি যেয়ে বাজু ধরেন। হাঁটতে শুরু করে নানা বললেন, “কখন যে মাটির দেহ নিথর হবে জানি না। সময়ের সাগর পারি দেওয়ার সময় হয়েছে। পারানি এখনো জোগাড় করতে পারিনি। আমাদের সাথে আমাদের সংসার বিলীয়মান হবে।”
“তা তো স্বাভাবিক। জানেন, আমার মন বেজার হলে মুখ ভেংচিয়ে বলে, তুমি অনুপ্ত নও।” বলে নানি সামনে তাকালে নানা অবাককন্ঠে বললেন, “এত শব্দ কোথায় যে পায়? ভেবে আমি তজ্জব হই।”
“ওর সাথে গল্পগুজব করলে আমার মগজ প্রায় বিকল হয়। আমরা যা বইয়ে পড়তাম তা বাস্তবে চর্চা করে।”
“তুমি ঠিক বলেছ। সৃজনী আসলে কাব্যগুণসমন্বিত কল্পনাবিলাসিনী। ওর মাঝে কাব্যমাধুর্য আছে, কল্পনায় আছে প্রবল শক্তি। ভাবজগতের ভাবিনী। কাব্যজগতের প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। অভিধান পড়ে আমার মগজ ফেনা হয়, দিবাতন চিন্তা করে জুতসই শব্দ খুঁজে বার করি। ওর অভাবনীয় ভাবপ্রকাশ এবং ভাববাচ্যে আমি সত্যি সম্মোহিত হই। চমৎকার শব্দ ব্যবহারে চমৎকৃত করে।”
“থতমত খেয়ে আমি প্রায় বিস্ময়বিকল, আর বিস্মিত করলে বিমূঢ় হয়ে ভিরমি খাব।” বলে নানি কাঁধ ঝুলিয়ে নানার মুখের দিকে তাকালে নানা মাথা নেড়ে হাসতে হাসতে বললেন, “চলো, চেতিয়ে আজ ওকে বিস্ময়ান্বিত করব।”
“এখন চেতালে ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরে খামোখা কাটা গায়ে নুন ছিটাবে।”
“নাচাকোঁদা করলেও ঠাণ্ডা মাথায় ডম্বরু বাজিয়ে অক্ষরডম্বর ফাটায়। চলো, আজ ওকে নাকাল করব।” বলে নানা মৃদু হাসলে নানি মাথা নেড়ে বললেন, “অপ্রত্যাশিতভাবে ভীষণ বিপদের সম্মুখীন হলে আমি অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপারে মহাব্যস্ত হব।”
“চিন্তার কারণ নেই, সকল সমস্যা আমি একলা সামলাব।” বলে নানা দ্রুত হেঁটে বসারঘরে প্রবেশ করলে, নানাকে শুনিয়ে সৃজনী কবিতাবৃত্তি করে, “নিশুতি রাতে কোকিলারা ডাকে নিরবধি, মনে আছে কত দুঃখ, নির্দয় হয়নি দরদি। নিলীয়মান স্বপ্নরা, নিশিগন্ধা ফুলের কলি, ষড়রিপুরা বিভীষণ, আশা হয়েছে কুহেলী।”
“কবিতার খাতায় এখন আর কবিতা থাকে না, শব্দরা হয়েছে উড়াল মাছ, আকাশে নাকি জলের সাগর আছে, সত্যাসত্য জানার জন্য কানাবগি হাঁটতে শুরু করেছে।”
“কবি হয়ে খুব ভালো করেছেন অন্তত আপনার সাথে গপসপ করতে পারব।”

আরও পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

© Mohammed Abdulhaque

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s