পরমাত্মীয়

“আত্মিক ভালোবাসার গল্প”

অধ্যাত্মতত্ত্বে তাত্ত্বিক হতে চেয়ে জেনেছি, পরমাত্মার প্রভাবে আত্মা প্রাণবন্ত এবং পরমাত্মীয়রা রক্তের সাথে সম্পৃক্ত। এসব প্রমাণসিদ্ধ এবং মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জেনেও অমরত্বে বিশ্বাসী শৌভিক জাদুবলে মায়াবন বানিয়ে আদ্যলীলা করার জন্য বৃহস্পতির বারবেলায় মোহসঞ্চারক তেগ উঁচিয়ে শিষ্যদের উদ্দেশে বললো… “শণ্মাস আগে হতাশ্বাস হলেও অবশেষে পূর্ণগ্রাসে পূর্বাভাস পেয়েছি। মাহেন্দ্রক্ষণে নিরঞ্জনার রক্ত পানে অমর হব।”
অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে এক শিষ্য স্বগতোক্তি করে… “অমর হওয়ার জন্য ঘি মধু খেয়ে মহাসত্ত্ব হয়েছিস। পঞ্চামৃতে অত্বর মুত্যু হয় জানলে অন্তত নুনের সাথে দূরত্ব বজায় রাখতে।”
শিষ্যের দিকে হিংস্রদৃষ্টে তাকিয়ে শৌভিক বললো… “গুরুহত্যা করে গূঢ়তত্ত্ব জেনেছি। তোদেরকে বশ করে অবশ্য হয়েছি। বেচালে উপরচালাক হতে চাইলে নিতলে পাঠাব।”
শিষ্য আবার স্বগতোক্তি করে… “যদি তুই অমরত্বের অর্থ জানতে, আমি শপৎ করে বলতে পারব মৃত্যুর জন্য তুই সদা প্রস্তুত থাকতে।”
শৌভিক চিৎকার করে বললো… “দৌড়ে যেয়ে নন্দিরগাঁওর নন্দিনীকে নিয়ে আয়। কালক্ষেপে কালান্তর হলে কালান্তক হবে।”
আদিষ্ট শিষ্য হাঁটতে শুরু করে নিম্নকণ্ঠে বললো… “মৃত্যুকে আমরা আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করি না এবং চাইলেই মৃত্যুকে স্পর্শ করা যায় না তবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়। নির্যাতক মানুষের নির্যাতনে প্রমাণিত হয়েছে, মানুষত্ব শব্দের গুরুত্বপূর্ণ অর্থ নেই। অন্যায় অত্যাচার হত্যা ধর্ষণ এসব মানুষকৃত, তাই অমানুষ শব্দকে হিংস্র জীবরা প্রত্যাখ্যান করেছে।”

শৌভিক তাদেরকে তাড়া দেয় এবং শিষ্যরা যখন তাড়াহুড়ো করে তখন মৌজার রাখালরা গরু নিয়ে নন্দিরগাঁওর গোঠে যায় এবং মাসুম নামের রাখাল বটগাছে হেলান দিয়ে বসে বাঁশি বাজায়। মোহনসুরে সম্মোহিত হয়ে নন্দিরগাঁওর জমিদারের মেয়ে দৌড়ে বেরোলে মা ওকে হেঁকে ডাকেন…. “মালীহা, দাঁড়া।”
পিছন ফিরে না তাকিয়ে মালীহা দৌড়ে বটতলে যেয়ে মাসুমের মুখোমুখি হয়ে বললো… “তোমার ভালোবাসার জন্য নিরাকুল হয়েছি। বাঁশির সুর আমাকে বশ করেছে। বীরপুরুষের মত ভালোবেসে আমাকে বিবশ করো।”
মাসুম পিছু হেঁটে হাসার চেষ্ট করে বললো… “আমি এক হাঘরে গরুরাখাল। রাখালি করার জন্য গরু নিয়ে গোঠে এসেছি। ঘাস খেয়ে গরুরা তাজা হলে আমার পাতে ভাত পড়বে।”
সানন্দে মালীহা বললো… “হালচাষ করতে চাইলে গোঠের গরু কিনে দেব। সংসারী হতে চাইলে তেপান্তে বাড়ি বানাবার জন্য রাজমিস্ত্রিকে আদেশ করব। আমাকে ভালোবাসলে, ভালোবাসাবাসির জন্য বনফুলে শয্যা জাগব।”

এমন সময় শিষ্য অনুশিষ্যরা তাদেরকে আক্রমণ করে এবং আঁধীঝড়ে পরিবেশ সমাচ্ছন্ন হয়। শিষ্য দৌড়ে যেয়ে মালীহার হাত ধরে মাসুমের দিকে তাকিয়ে ব্যস্তকণ্ঠে বললো… “বাঁচতে চাইলে দৌড়ে দিগন্তরপুর যা। আমি তোকে সাহায্য করতে পারব না।”
শিষ্যের দিকে তাকিয়ে মালীহা বললো… “তাকে সাহায্য করো নইলে ঘোর অমঙ্গল হবে। পরগণার লোকজন বেঘোরে মরব।”
শিষ্য হতাশ হয়ে বললো… “আমি এখন নিয়ন্ত্রিত এবং ওরা আড়ে-হাতে লেগেছে। তোড়-জোড়ে লাভ হবে না। জোরাজুরি করলে অমঙ্গল হবে। আড়ে-দিঘে দৌড়ালে আমাকেও মেরে ফেলবে। আমাকে বিশ্বাস কর, আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি।”
মালীহা :.. “ভালোবাসা ভেলকিবাজি নয়। ভালোবাসার প্রভাবে বন্যরাও বিশ্বস্ত হয়। ভালোবাসার মানুষকে বরণ করার জন্য মানুষ শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অপেক্ষা করে। অবিশ্বাস্য বিষয় বিশ্বাস করে তুমি ভেলকিবাজ হয়েছ। বিশ্বাস করো, চাইলেও আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারব না।”

আরও পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন

© Mohammed Abdulhaque

Leave a Reply

Please log in using one of these methods to post your comment:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s