“বিশ্বমানের শহুরে প্রেমীক প্রেমিকার গল্প”
অপরাহ্নে লোকজন ভিক্টোরিয়া পার্কে হাঁটাহাঁটি এবং দৌড়াদৌড়ি করছিল। পেশিবহুল বলিষ্ঠ যুবক ঝিলের পারে বেঞ্চে বসে ক্লান্ত সূর্যকে জলে হাবুডুবু খেতে দেখে গম্ভীরকণ্ঠে বললো, “মানসী, ভালোবাসি তোমাকে আজীবন ভালোবাসব।”
এমন সময় গাড়ি থেকে বেরিয়ে এক যুবতী দু হাত নেড়ে উচ্চকণ্ঠে বললো, “সরণ! ওখানে কী করছ?”
সরণ মাথা তুলে তাকিয়ে মৃদুহেসে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে বললো, “সুরভি, কেমন আছ?”
ডবকা শারিকার মত ঠাট ঠমক ঠসকে হেঁটে যেয়ে উচ্ছলকণ্ঠে সুরভি বললো, “আমি ঠিকঠাক আছি, তোমার খবর বলো।”
“মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানে বসার পণ করেছিলাম।”
“পণরক্ষার জন্য কুড়ি গণ্ডা মন্ডা মানত করতে হবে নাকি?” বলে সুরভি অপলকদৃষ্টে তাকালে, হাসার চেষ্টা করে সরণ বললো, “তিন সত্য করে সত্য বললে আসল সত্য হবে, মানসীর সাথে গপসপ করার জন্য আজ আমি দৃঢ়সংকল্প করেছিলাম।”
“তুমি নিশ্চয় জানো, পোড়ো বাড়িতে ভূতরা ঠিকাদারি করে এবং পড়ো-পড়ো বাড়িতে কেউ বেড়াতে যায় না। আজ অন্তত অন্তরের কথা বলো, একলা-একলি এখানে কী করছিলে?”
“সময়কে হত্য করার জন্য চঞ্চল মনকে লীলাচঞ্চল বাতাসে ভাসিয়ে লীলাময়ের লীলখেলা দেখছিলাম। তুমি কেন এসেছ?”
“জড়ি-বুটি গলায় পরে ডাকসুন্দরী হওয়ার জন্য টোটকা চিকিৎসা করাতে চাই। কবিরাজের আজুরা জোগাড় করে আজ আমি বাজারে এসেছি।”
“সাপ ধরার মন্ত্র জপে সত্যি বেজির লেজে পাড়া মেরেছিলে নাকি?” বলে সরণ চোখ কপাল তুললে, মাথা নেড়ে মুখ বেজার করে সুরভি বললো, “তুমি শুনতে চাইলে ইষ্টমন্ত্র জপে সত্যাসত্য বলব।”
“বলতে শুরু করলে মনোযোগ দিয়ে শুনব, আজ আর হুতুমের মতো মুখ বানাব না।”
“হাতের কাজ ফেলে বাসায় পৌঁছে জানতে পেরেছিলাম, ফুসমন্তরে আব্বু আম্মুকে ফুসলিয়ে ওরা কেনাকাটায় গিয়েছে।”
“ওরে সর্বনাশ! কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?”
“Bluewater.”
“তুমি চাইলে এখুনি ওদেরকে ধাওয়া করতে পারবে এবং আমি তোমাকে উৎসাহিত করব।” বলে সরণ দুষ্টুহাসি হাসলে মেঘে ভিজা কউতরের মত শিউরে সুরভি বললো, “আকাঙ্ক্ষী মনে অনেক আকাঙ্ক্ষা। ওদেরকে ধাওয়া করে পটোলতোলা যেতে চাই না।”
“তুমি না জানলেও আমি জানি, গরিবের দুঃখে হারীর মন কাঁদে।”
“কার কথা বলছ?”
“দুঃখের সাথে হারী যোগ হলে দুঃখহরীর অর্থ হয়, যে দুঃখ হরণ করে।”
“অবশেষে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি, বাদীর মত তুমিও নৈরাশ্যবাদে বিশ্বাসী।”
“দুঃখবাদীদের সাথে আমার কখনো বনিবনা হয়নি তা শুধু আমি জানি। যাক, চাইলে চলো ওদেরকে ধাওয়া করব।”
“ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চিন্তা বাদ দাও। যানপথে উঠেই বলবে, মানসী, ভালোবাসি তোমাকে আজীবন ভালোবাসব।” বলে সুরভি আড়চোখে তাকায়। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সাধারণকণ্ঠে সরণ বললো, “চাইলেও বাল্যপ্রেম ভুলা যায় না। স্যতাসত্য তুমি জানো এবং আমিও অপারগ।”
“শুনেছি সাধ্যসাধনায় অসাধ্য সাধন হয়।”
“হ্যাঁ, এমন খবর আমিও শুনেছিলাম।”
“তাইলে চেষ্টা করো না কেন?”
“পরে চেষ্টা করব। এখন চলো, ওদেরকে ধাওয়া করলে বিমনা মন চনচনে হবে।”
“মনেমনে মানসীর সাথে রসালাপ করে তুমি বাড়ি চলে যাও। ওদেরকে ধাওয়া করে বিদেহী হতে চাই না।” বলে সুরভি কপট হাসলে, বুক ভরে শ্বাস টেনে সরণ বললো, “বাতাসে প্রেম থাকলে প্রাণীরা প্রাণোচ্ছল হয়। পরিবেশ বিষাক্ত হলে প্রাণীরা শ্বাসকষ্টে ভোগে। বাস্তববাদী হয়ে জেনেছি সম্পদ এবং শক্তির দাপটে মানবতা থরথর করে কাঁপে।”
“কলঙ্ক আজীবন থাকে, কলঙ্কিত হলে কাঁকন কনকন করে এবং কলঙ্কের নুপুর দুপুরে ঝনঝন করে। সভ্যতার অর্থ যারা জানে না তাদের জন্য সব বৈধ, ওরা কোনো ধর্ম মানে না, ওরা অত্যন্ত মারাত্মকর।”
“সংসারাসক্তরা সহজে হতাশগ্রস্ত হয় এবং বিপাকে পড়লে ঘোর সংসারীরা ভোগবাসনাবিমুখ হতে চায়। প্রেম বাতাসের মত। যার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকু আপসে পায়। বেশি হাঁসফাঁস করলে শ্বাসকষ্ট হয়।”
“আমি তাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে যা চেয়েছিলে তা আমার আয়ত্তে ছিল না। তখন তুমি জাননি সবকিছু সবার আয়ত্তে থাকে না, এখন সবকিছু পাওয়ার লোভ আর আমার মনে নেই।”
“সানন্দে তুমি তোমার জীবন উপভোগ করো। তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করে তোমার সুখ নষ্ট করার অধিকার কাউকে দিয় না। প্রিয়জনরাই আমাদেরকে মানিসক নির্যাতন করে এবং নির্যাতিতরা নীরবে তা সহ্য করে।” বলে সরণ বুক ভরে শ্বাস টানলে, দাঁত কটমট করে সুরভি বললো, “ধরতে পারলে মনকে আজ উচিত শিক্ষা দিতাম।”
“অবুঝ মন কী অপরাধ করেছে?”