সায়ংকালে সূর্য ডুবতে শুরু করেছিল। ভাসমান মেঘের সাথে চাঁদ লুকোচুরি খেলছিল। পরিবেশে মৃদুমন্দ বাতাস বইছিল। এক প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করছিল। নিঃসঙ্গ এবং মর্মাহত, সাগরসৈকতে হাঁটছিল এবং কড়ি কুড়াচ্ছিল। যা তার মনকে বিবশ করছিল। যথেষ্ট কড়ি কুড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে অগণ্য ঢেউ গোনছিল। অবুঝের মত পানিতে হাত দিয়ে চাঁদকে স্পর্শ করবে এমন সময় এক অপরূপা তার সামনে আবির্ভূত হয়ে বললো, “কা’র জন্য অপেক্ষা করছ?”
প্রেমিক চমকে ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি আমার প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
অপরূপা একটা পাথরে বসে তার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। প্রেমিক এগিয়ে যেয়ে বললো, “আমি জানতে ইচ্ছুক, তুমি কে বা কী?”
“আমি আমার প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার পাশে বসো।”
প্রেমিক মাথা নেড়ে বালিতে বসে কড়ি নিয়ে খেলতে শুরু করে আড়দৃষ্টে তাকিয়ে বললো, “ইতিপূর্বে তোমাকে দেখিনি।”
“এখানে কি সচরাচর আসো?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি কি নিঃসঙ্গ?”
“হ্যাঁ।”
“তোমার হাবভাবে মর্মব্যথা বিদ্যমান, কেন বলবে?”
প্রেমিক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “প্রেম শুধু একটা শব্দ, তাই না?”
“হ্যাঁ, প্রেম শুধু একটা শব্দ।” বলে অপরূপা বিচলিত হয়ে মাথা দোলায়। প্রেমিক পাথরে পিঠ রেখে সাগরে কড়ি ছুঁড়ে বললো, “প্রেম আরাধ্য কিন্তু কাম ঘৃণ্য। কামিনীর কামনায় বারবার কামার্ত হই।”
“তুমি সত্যি মর্মাহত, তাই না?”
“হ্যাঁ, আমাকে আমার প্রেমিকা মর্মাহত করেছে।”
“আমিও মর্মাহত।” বলে অপরূপা দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে। প্রেমিক চোখ বুজে চিৎকার করে বললো, “বিরহানলে দগ্ধ হওয়ার জন্য কেন তার প্রেমে পড়েছিলাম?”
অপরূপা পিছন ফিরে বললো, “প্রমা আনন্দে ভরপুর এবং প্রেম হলো আনন্দিত হওয়ার জন্য।”
“সত্যাসত্য না জেনে আমি আনন্দিত হওয়ার মানসে সানন্দে নিরানন্দ হয়েছি।”
“আক্রোশে নিরাশ হলে তুমি নিষ্প্রতিভ হবে, সাঁতারুর জন্য নিষ্ফল আক্রোশ নিষ্প্রয়োজন।”
“আমি অত্যন্ত মর্মাহত। স্বপ্নহীন শয়ন আমার জন্য কষ্টদায়ক, বিচ্ছেদের রাত স্যতি যন্ত্রনাদায়ক।”
অপরূপা পিছু হেঁটে বললো, “আমি তোমাকে কী ডাকব?”
প্রেমিক উত্তেজিত কণ্ঠে বললো, “কী ডাকতে চাও?”
অপরূপা দুষ্টুহাসি হেসে বললো, “প্রেমিক ডাকি?”
“আহ, বড্ড লেগেছে।”
“আমি কী করলাম?” বলে অপরূপা খিল খিল করে হাসে।
“আমি জানি তুমি নরফাঁদ। দয়া করে ভোঁয়া ধরে টান দিয় না, সত্যি খুব কষ্ট হয়।”
“আমার প্রেমিক আর ফিরবে না।”
“আমিও অপেক্ষা করছিলাম মাত্র।”
“কার জন্য?”
“কারো সাথে মর্মব্যথা ভাগ করতে চাই।”
“আমার সাথে ভাগ করবে?”
“তুমি হয়তো অলোক সুন্দরী।”
“তুমি আমাকে প্রেমিকা ডাকতে পারবে।”
“এখন তুমি আমার হৃদয় ধরে টানছ এবং আমার পেটে কাতুকুতু হচ্ছে।”
“কেন?”
“তুমি প্রিয়দর্শিনী এবং হয়তো স্বপ্নচারিণী।”
“তুমি অত্যন্ত বলিষ্ঠ এবং আমি তোমার বাহুতে আবদ্ধ হেত চাই। দয়া করে এগিয়ে এসে বলো, ওগো রূপসি আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“আমি বলতে চাই কিন্তু তুমি মানবিকা।”
“আমি অলোকসুন্দরী মাত্র।”
“যৌবনমদমত্তা…।”
“আমাকে একটা কবিতা শোনাও।”
“আমি এক ব্যর্থ প্রেমিক।”
অপরূপা কাছে যেয়ে অনুপলে তার অধর চুমে বললল, “এখন কী?”
প্রেমিক ধপাস করে বালিতে বসে বললো, “তা কী ছিল?”
অপরূপা অট্টহাসি হেসে বললো, “প্রেমচুম্বন।”
প্রেমিক দুহাত উঁচিয়ে বললো, “আমাকে আমার গন্তব্যে নিয়ে যাও।”
অপরূপা হাসতে হাসতে বললো, “সবাই বাঁচার জন্য মরনপণ করে। তুমি মরতে চাও কেন?”
“আমি মরতে চাই, কারণ…।”
“কথাগুলো বলো।”
প্রেমিক হাসতে হাসতে বললো, “আমাকে অধিকার দাও। আমি তোমার কামনাকে ক্লান্ত করব, তুমি প্রাণবন্ত।”
“হে অনামিক।”
প্রেমিক হাঁটতে শুরু করে হাত নেড়ে বললো, “আমাকে প্রেমিক ডাকো, আমি ফিরে তাকাব।”
“তোমার নাম বলো, হাত ধরে হেঁটে আমরা নিধুবনে যাব।”
“আমি চাই আমার প্রেমিকা আমার সাথে প্রেম করুক, আমি যেমন করে প্রেম করতে চাই।”
অপরূপা ডেকে বললো, “আমাকে ভালোবাসা শিখালে আমি তোমাকে ভালোবাসব।”
“ঘাটের-মড়া মনকে প্রেম উজ্জীবীত করে এবং প্রেমিকা হলো প্রেম করার জন্য।”
“ফিরে তাকাও, দৌড়ে তোমার উরে আসব।”
“আমি একা পথ চলছি, পৃথিবী এখন প্রেমহীন, আমি হতাশ্বাস হয়েছি, প্রেমিকা হলো আনন্দদায়িনী, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“তোমার দুঃস্বপ্নে প্রবেশ করে আমি তোমাকে ভয়ার্ত করতে চাই না। পিছন ফিরে তাকাও এবং আমাকে উরে টানো।”
“ডান হাত বুকের উপর রেখে গলার জোরে বলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবাসো আমাকে যেমন ভালোবাসা আমি চাই। ভালোবাসাবাসির জন্য আমি ভালোবাসার সাগরে ভাসতে চাই।”
অপরূপা দৌড়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং যথেষ্ট ভালোবাসা চাই। সানন্দে আমার তুনপরশ করো।”
প্রেমিক ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুহাসি হেসে বললো, “তুমি পরমা সুন্দরী, আপাতদৃষ্টে তোমাকে দেখে আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। মনে কামেচ্ছা, চোখে নেশা, অধরমধু পান করিয়ে মাতোয়ালা করো। তোমাকে হাসাবার জন্য ঝাপটে চাঁদকে ধরে টিপ বানিয়ে তোমার কপালে দেব। বাহুতে এসে কামনার নিবৃত্তি করে উদাসিপনার পরিসমাপ্তি করো, হাত ধরে বরণ করলে, কলঙ্ক অথবা কেচ্ছা হবে না। আমি সুখীত হতে চাই। আশায় পূর্ণ পেয়ালা তোমার আঁজলায় রাখতে চাই। নিরাপত্তার জন্য মনকে প্রহরী বানাব। অনেকে বলে আজকাল প্রেম অচল হয়েছে, ছলে বলে আমি তোমাকে রাজি করতে চাই না। স্বেচ্ছায় আমার বাহুতে আসলে দুজনের ইষ্টাপত্তি হবে।”
“মনের বনে বিয়ের ফুল ফুটেছে, মেন্ধি গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে, বনফুলে বরণ মালা গেঁথেছি। জীবন পথে একা চলা যায় না। সুখ দুঃখ ভাগ করার জন্য ভাগী চাই, বান্ধব হলে বান্ধবী হব। নিশি ঘনাচ্ছে, সুখবাসরে তনুমিলন হবে, জানি কামর্ত মনে কামেচ্ছা।”
“আমার মনে দানেচ্ছা। বল খাঁটিয়ে নরীর ধর্মনষ্ট করা যায়, ভালোবাসা আদায় করা যায় না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, এগিয়ে আসো পবিত্র মনে বিশ্বাস করো আমাকে, হাতে হাত রেখে যা জানতে চাও জিজ্ঞেস করো, যদি তোমার মনে থাকে পৃচ্ছা, দোহাই দিচ্ছি প্রকাশ করো না অনিচ্ছা। স্বেচ্ছায় পাশে আসলে বাসনা পূরবে সদিচ্ছা।”
সমাপ্ত