ধাধসপুরে বারবেলা

আধিদৈবিক ভালোবাসার গল্প

জ্বীন এবং ভূতের উপর ভিত্তি করে কাল্পনিক ভালোবাসার গল্পের নায়ক নায়িকা চাচাতো ভাইবোন এবং দুজনই মা বাবার একমাত্র সন্তন। নায়ক অস্বাভাবিকরকম অদ্ভুত এবং বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। ওরা একে অন্যকে ভালোবাসে কিন্তু মুখে বলে না। আষাঢ়ে গল্প হলেও নায়কের প্রতি এক পরী আকৃষ্ট হয় এবং নায়িকাকে এক জ্বীন অপহরণ করতে চায়। এসবের কারণ তাদের গ্রামের এক জুজুবুড়ি জিনকে বশ্য করেছিল। জুজুবুড়ির শিষ্য অনুশিষ্যরা মানুষের রক্ত মাংসে আসক্ত যা নায়ক জানতে পেরে তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য মন্ত্রবলে প্রস্তুত হয়। নায়িকার বয়স আঠারো হলে ওকে অপহরণ করার জন্য জ্বীন আবির্ভূত হয়। নায়ক জিনের জন্য মরণফাঁদ পাতে। জ্বীন এবং পরী সম্পর্কে নায়িকা অবগত থাকলেও কাউকে বলে বুঝাতে পারেনা। জ্বীন এবং পরী হলো খেলার সাথি। জ্বীন পরীকে সহ্য করতে পারে না কিন্তু পরী জিনকে ভালোবাসে। জ্বীন এবং পরী বাড়াবাড়ি করলে নায়ক আক্রমাক হয় এবং এক পর্যায়ে হাতের ভোজলি দিয়ে নায়িকাকে আহত করে। আপোসে বোঝাপড়ার পর জ্বীন এবং পরী তাদেরকে সাহায্য করে এবং চিকিৎসার জন্য নায়িকাকে নিয়ে শহরে গেলে জুজুবুড়ির শিষ্য অনুশিষ্যরা জাদু দ্বারা তাদেরকে মায়াবনে নিয়ে যায়। নায়ক তাদের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং জুজুবুড়িকে হত্যা করে নায়িকাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে। কাল্পনিক গল্প হলেও এই উপন্যাসে যথেষ্ট প্রমাণিত তথ্য আছে।

অসত্য জেনেও বাল্যকালে দত্যিদানো এবং রাক্ষস খোক্কসের গল্প পড়েছি। বয়সের সাথে বাস্তবিক হয়ে জেনেছি, বরাবর বারোটায় ভূতের সাথে কেউ দেখা করতে চায় না এবং কুঁদরুবন থেকে কুঁদুলি বেরিয়ে কোঁদা দিলে উঠেপড়ে দৌড়াতে হয়।
এসব ভেবে ভাবুক হওয়ার দুর্ভাবনা বাদ দিয়ে উঠানে হাঁটাচলা করছিলাম। ঠিক মাথার উপর সূর্য থামলে, ঠাঠাপড়া রৌদ্রতাপে মাটি তেতে ভাপ উঠতে শুরু করে, ঘনঘন বিজলি চমকে কড়কড় কড়াৎ শব্দে বাজ ফেটে ভূমিকম্পবলয় থেকে খপুষ্পরা বেরিয়ে অস্পষ্টালোকে লুকালে শুরু হয়েছিল ধাধসপুরে বারবেলা।
অবিশ্বাস্য ভাবে ভূতাবির্ভাব এবং ভূতার্ত লোকদের অদ্ভুত কার্যকলাপে পরিবেশ অস্বাভাবিক হয়। আরশোলা পাখির মত উড়ে, নেংটি ইঁদুররা নির্ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করে এবং বনগহন থেকে বন্যকুকুর বেরোলে পরিবেশ শ্বাপদসংকুল হয়।
তখন খালি পায়ের নিচে ঝুরো মাটি আর মাথার উপর ছিল বটের ঝুরি, মানে বরাবার বারোটায় জারিজুরির সাড়ে বারোটা বেজেছিল। ভোজপুরি ভূতরা খোরপোশের জন্য শোরগোল করলে ওঝারা যে শোল মাছ পুড়িয়ে ভোগ দেয় তা জানলে পোলো দিয়ে জাওলা ধরতাম। না জানার দরুন ভোজবাজির তাবিজ আনার জন্য আমি যখন কবিরাজের বাড়ি যাই তখন এক জোড়া শ্যামা অভয়ারণ্যের ধারেপাশে আধার খোঁজছিল। হঠাৎ অলোক থেকে দাঁড়কাক বেরিয়ে একটাকে ছোঁ মেরে ধরতে ব্যর্থ হলে, ওটা আড়ংবাড়ং করে উড়ে অন্যটার সামনে যায় এবং দুটো মিলে কাক ধাওয়া করে পরিবেশে অদৃশ্য হয়।
পেশিবহুল যুবক সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে চিন্তিত হয়ে স্বগতোক্তি করে… “জিনের তৈরি পাতলুন পিন্ধে জিজীবিষু মানুষ ঘোড়ার জিনে বসে যুযুৎসু জ্বীনের মুখোমুখি হলে রক্ত শুকিয়ে অজিন কালাজিন হয়।”
প্রাণোচ্ছল যুবতী অভয়ারণ্যের সীমান্তে দাঁড়িয়ে হেঁকে-ডেকে বললো… “আয়মান ভাই! তুমি কোথায়?”
যুবক ডাকে সাড়া দিয়ে ধমকে বললো… “সরসী! তুই এখানে কী করছিস?”
সরসী :.. “আমার ভয় হচ্ছে। দৌড়ে আসো।”
আয়মান :.. “আমি পারব না, আমার অনেক কাজ আছে।”
সরসী অগ্রসর হতে চেয়ে অত্যাশ্চর্য হয়ে থমকে দাঁড়ায় এবং হাতড়ে অদৃশ্য দেয়ালের মত কিছু অনুভব করে পিছু হাঁটে। আয়মান চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস টানলে কেউ তাকে কানে কানে বলে, তুমি যা ভাবছ তা সত্য এবং অবিশ্বাস্য হলেও দত্যিদানো আছে। নির্ধূম আগুনে সৃষ্ট জীবরা ধরণ ধারণ বদলে ভাসমান পাখি এবং সর্পাকৃতিতে চলাফেরা করে। জুজুবুড়ির ভূরিভোজনের দৃশ্য দেখলে ভয় এবং বিস্ময়ে তুমি অভিভূত হবে।
আয়মান চোখ মেলে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে সরসীকে অনতিদূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো… “এভাবে কী দেখছিস?”
সরসী :.. “তোমাকে ভালো করে দেখার চেষ্টা করছি।”
আয়মান :.. “আমি নিশ্চয় বনমানুষ অথবা দড়ায় বাঁধা বানর?”
সরসী :.. “আমি বিশ্বাস করি তুমি ঝানু শিকারী এবং হরিণ শিকার করে শিকে পুড়ে একলা খেতে পারবে না তাই তোমার অর্ধী হওয়ার জন্য পড়িমরি করে দৌড়ে এসেছি।”
আয়মান :.. “আমার সাথে ঠাট্টা টিটকারি না করে ভোঁ-দৌড়ে বাড়ি যা। পরিবেশ এবং পরিস্থিতিতে অস্থিরতা। কখন কী হবে আমি জানি না।”
সরসী :.. “তোমার কী হয়েছে, দিনানুদিন অস্বাভাবিক হচ্ছ কেন?”
আয়মান সতর্কতার সাথে চারপাশে তাকিয়ে বললো… “আমার কিছু হয়নি। তোর মগজে সমস্যা আছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি যা!”
সরসী :.. “আজ কী শিকার করেছ?”
আয়মান :.. “তুই এখনো যাসনি?”
সরসী :.. “আজ তোমার সাথে বনভোজন করতে চাই।”
আয়মান :.. “তোর মত ছুঁড়ির সাথে আমি চড়ুইভাতি করব না, যা ভাগ!”
সরসী :.. “সাহসে কুলাতে পারলে আমার উরে আসো! জড়াজড়ি করে আমি তোমার জারিজুরি দেখতে চাই।”
আয়মান কথা না বলে দাঁত কটমট করে ঢিল ছুড়ে মারলে, সরসী দু হাতে কপাল চেপে ধরে বসে সশব্দে কাঁদতে শুরু করে। আয়মান দৌড়ে যেয়ে ব্যস্তকণ্ঠে বললো… “কাঁদছিস কেন, কপালে লেগেছে নাকি?”
সরসী হাত সরালে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোয়। আয়মান শার্ট খুলে ওর কপালে বাঁধতে বাঁধতে বললো… “জুজুবুড়ির সাথে বোঝাপড়া করার জন্য আমাকে অনুসরণ করেছিলে নাকি?”
সরসী :.. “তা তুমি জানলে কেমনে?”
আয়মান :.. “আমরা এখন কোথায় জানিস?”

তারপর পড়ার জন্য ইবই ডাউনলোড করুন

© Mohammed Abdulhaque