বাস্তব পরিস্থিতি ভিত্তিক দার্শনিক কথাশিল্পের নায়ক শুরুতে বিশিষ্ট হওয়ার জন্য ইংলিশ চর্চা করলেও পরে অধ্যাত্মদর্শনে আত্মসংযমী হওয়ার জন্য আধ্যাত্মিক সাধনা করে। আর নায়িকা বাংলায় বিদুষী হতে চায়। নায়ক নায়িকাকে ভালোবাসে কিন্তু তার বৈহাসিক আচার আচরণের কারণ নায়িকা তাকে সহ্য করতে পারে না। নায়িকার মনের মানুষ হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার পরে মারামারি করে হাজতে যায় এবং বাবা জমানত না দিয়ে কৃতকর্মের জন্য শাস্তিভোগের আদেশ করেন। শাস্তিভোগের পর সে নিরুদ্দেশ হয় এবং বারো বছর আধ্যাত্মিক সাধনায় সিদ্ধাই হয়ে ফিরে। তার হাবভাবে দৈবশক্তির প্রভাব। বিশ্বাসের জোরে নায়িকা তার জন্য অপেক্ষা করে এবং অবশেষে তাদের বিয়ে হয়।
একমাত্র সন্তানরা অত্যন্ত শান্তশিষ্ট হয় জানার পর থেকে বিশিষ্ট হওয়ার জন্য হৃদয় ইংরেজি ভাষায় বিশারদ হওয়ার ব্রত করেছে। তার বন্ধুরা তাকে অনেক নামে ডাকে। কেউ ডাকে রিক, কেউ ডাকে রিকি, কেউ ডাকে রক আবার কেউ ডাকে রকি। সহপাঠীরা তাকে সহ্য করতে পারে না এবং সেও খামোখা ভাঁড়ামি করে। যাইহোক, গ্রীষ্মের ছুটি শেষে ইউনির সামনে হাসিঠাট্টা করছিল। হঠাৎ ফ্যাশনসম্মত রূপলাবণ্যবতী ছাত্রীর মুখোমুখি হলে, হৃদয় নিজেকে সামলিয়ে ভদ্রলোকের মত বলল… “"আমি অত্যন্ত দুঃখিত। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করো।" উত্ত্যক্ত ছাত্রী ত্যক্ত হয়ে পাশ কেটে চলে যেতে চাইলে, হৃদয় ডান হাত প্রসারিত করে বলল… “পরিচিত হওয়ার জন্য আমি তোমার ডাকনাম জানতে চাই।” “ইস!” বলে ছাত্রী বিরক্তি প্রকাশ করে থমকে দাঁড়ায় এবং তার দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে… “এলোপাথাড়ি দৌড়ে এঁড়ে লোকের খপ্পরে পড়লাম কেমনে? জাতে উঠার জন্য এককালীন লোকটা জাতিচ্যুত হয়েছে এবং রাজমজুর হওয়ার জন্য ইংরেজি ভাষা চর্চা করছে। একগাল খাবারের জন্য নাজানি কী করবে? এর সাথে দূরত্ব বজায় রাখলে জাতিগত প্রভেদ এবং জন্মগত স্বভাব বজায় থাকবে নইলে অজাতকুজাতে বজ্জাত জন্মাবে।” হৃদয় কিছু শুনার ভান করে বলল… “মানসীকে মানাবার জন্য মানস করেছি, মুনিয়াকে পোষার জন্য আপোষ করেছি। যার সন্ধানে সন্ধানী হয়েছিলাম আজ তার সন্ধন পেয়েছি।” ছাত্রী অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে গম্ভীরকণ্ঠে বলল… “নিষ্ণাতে নিষ্পত্তি হলে, নিষ্পেষণ নিষ্প্রয়োজন। নিষ্কারণে নিষ্প্রাণ ভাবপ্রকাশ নিষ্ফল হয়েছে। আমি নিষ্পাপ নই, নিষ্পুণ্য শব্দে আবেগ নিষ্প্রবাহ হয়। তোমার হাবভাব নিষ্পাদক এবং সূর্য এখনো নিষ্প্রভ হয়নি। স্বেচ্ছাচারীকে দিগ্দর্শন করে যথেচ্ছাচারিণী হতে চাই না। লেখাপড়া বিরক্তিকর হলে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য মনগড়া খোঁয়াড়ে যাও।” হৃদয় দুচোখ কপালে তুলে সভয়ে বলল… “আপনি কি আমার সাথে কথা বলছেন?" ছাত্রী তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল… “নিষ্ঠুর তুমি নিষ্ঠাবান হওয়ার চেষ্টা করলে অন্তরাত্মা সন্তুষ্ট হবে। লোকাচারের অর্থ জানলে সমাজের রীতিনীতি অনুযায়ী সামাজিক প্রথা পালন করতে পারবে এবং সকলের মঙ্গল হবে।" হৃদয় দুহাতে মাথা চেপে ধরে বলল… “মাথায় ঠাঠা পড়ে আমার আক্কেলগুড়ুম হয়েছে! তাড়াতাড়ি হাতুড়ে ডাক্তারকে ডাকো। ডরে-বয়ে আমার দাঁত কটকট করছে। আমাকে কয়েকটা তিলকুট দাও।” ছাত্রী মাথা নেড়ে বলল… “প্রবাহিত সময়ের সাথে পাথরের ছায়া নড়ে, চাইলেও আমি অনড় হতে পারব না। নড়েচড়ে সরে দাঁড়ালে তড়বড় করে চলে যাব। নভোনীল শাড়ি পরে নারীরা দৌড়াতে পারে না।” আরেক ছাত্রী ডেকে বলল… “নদী! কী হয়েছে?" নদী ঠাট বজায় রেখে ঘটঘট করে হেঁটে যেতে যেতে বলল… “সুষ্ঠু মাথা নষ্ট করার জন্য ফ্রায়েড রাইস খেয়ে এই লোকটা আমার সাথে কথা কাটাকাটি করছে, তারোপর ঠাঠাপড়া রোদের তেজে মাথার মগজ তাতাচ্ছে।” অন্য ছাত্রী মাথা দিয়ে ইশারা করলে, হৃদয় মন্ত্রমুগ্ধের মত বলল… “এত নিখুঁত সুন্দরী ইতিপূর্বে আমি কোথাও দেখিনি।” ছাত্রী :.. "ওরে অবাঙাল! বাংলা শিখে বাঙাল হওয়ার চেষ্টা করলে অন্তত তোর মঙ্গল হবে। মনে রাখিস, সচেষ্টরাই সফল হয়।” হৃদয় :.. “বিশ্বাস কর, নদীর একটা কথাও আমি বুঝিনি। আমার দাদা প্রদাদাকে বকেছিল নাকি?"

You must be logged in to post a comment.