জাতে বাংলাদেশি

সামাজিক উপন্যাস

স্বকপোলকল্পিত গল্পের নায়ক নায়িকার নাম সামী এবং পাপিয়া। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশ্যে ওরা লন্ডন শহর থেকে কাকভোরে রওনা হয় এবং চলন্ত ট্রেনে বসে বাড়ি ভাড়ার বিবরণ পড়ে পাপিয়া অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে হাতের মোবাইল যখন ব্যাগে রাখে সামী তখন ব্যাকপ্যাক পিঠে নিয়ে নামার জন্য প্রস্তুত হয়।
যথাসময় কেমব্রিজ স্টেশনে ট্রেন থামলে প্রথম বগি থেকে সবার আগে সামী বেরোয় এবং শেষ বগি থেকে সবার শেষে ট্রলি লাগেজ ঠেলে পাপিয়া বেরিয়ে চারপাশে তাকায়। ট্রেন চলতে শুরু করলে পাপিয়া ব্যতিব্যস্ত হয়ে কিছু খুঁজে না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পাবলিক টেলিফোন থেকে মা বাবার সাথে কথা বলে।
সামী স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাড়ি ভাড়া করার জন্য শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে ক্ষুধা তৃষ্ণায় ক্লান্ত হয়ে ত্বরিতাহার্যের দোকানে ঢুকার সময় পাপিয়ার কোঁকানি কোঁথানি শুনে লাগেজ উঠাতে সাহায্য করে বলল… “আপনি কি দেশি?”
পাপিয়া “হ্যাঁ” বলে দোকানে প্রবেশ করে লাগেজ পাশে টানে। সামী সরে দাঁড়িয়ে স্বগতোক্তি করে… “চন্দ্রকে অর্ধচন্দ্র দেখিয়ে চন্দ্রিকা হওয়ার জন্য চন্দ্রবিন্দু বিদেশ এসেছে।”
পাপিয়া পিছনে তাকিয়ে লোকজনের ভিড় দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেও তাড়াতাড়ি খাবারের অর্ডার করে দুজনের টেবিলে বসে প্রেরণামূলক প্রবাদ পড়ে… "শেষকথা বলতে কোনো কথা নেই, শুরু করা বড় কথা। কার্পণ্যে কৃপণ কষ্টভোগ করে। বনাগ্নিতে পুড়ে বনের সৌন্দর্য বাড়ে। ক্ষমাগুণে ক্ষমী অক্ষমকে ক্ষমা করে। আপাতদৃষ্টিতে সম্মোহনী শক্তি থাকে এবং ভালোবাসা জীবনকে আনন্দদায়ক করে।”
সামী হাতের ইশারায় খাবারের ছবি দেখিয়ে বিল পরিশোধ করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে স্মরণীয় উক্তি মুখস্থ করে… "সংসারজীবনে প্রবেশ করতে চাইলে কারো হাত ধরতে হয়, সংসার সাজাতে চাইলে টাকাপয়সার প্রয়োজন হয়, সংসার চালাবার জন্য আপ্রাণ খেটে অর্থোপার্জন করতে হয়, ভালোবাসাবাসির জন্য ভালো বাসার প্রয়োজন হয়, বাসা ভাড়ার টাকার জন্য আঠারো ঘণ্টা কাজ করতে হয়, আমি তোমাকে ভালোবাসি জপে সংসার চালানো সম্ভবপর নয়।”

[ ] আধানেংটা টেটিয়া দোকানে প্রবেশ করে। তার হাতে বালা নাকে ফুল এবং গলায় টোটকা-তাবিজ দেখে ক্ষুধার্তরা ক্লান্তি ভুলে রহস্যসন্ধানী হলে টেটিয়ার মোবাইলে অস্বাভাবিককণ্ঠে রিং বাজে... “না খেয়েছে বাঘে না খেয়েছে রাক্ষসে, দুর্বলের দল কি হাপিশ হয়েছে?"
টেটিয়া বাঁ হাতে ট্রাউজার্স টেনে ডান হাতে মোবাইল কানে লাগিয়ে কর্কশকণ্ঠে বলল... "অবশেষে জানাজানি হয়েছে! দুঃস্বপ্নের ভয়ে ওরা পানি ছাড়া ঘুমের বড়ি গিলেছে।”
টেটিয়ার হাঁটাহাঁটি এবং কথা কাটাকাটি শুনে প্রত্যক্ষর্শীদের দাঁত কটকট করে আক্কেলগুড়ুম হয়। [ ]

সামী টেটিয়ার দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে… "এই পাজি নিজের ইজ্জত মেরে আজ অন্যকে বেইজ্জত করবে। পেন্টালুন নামিয়ে নেংটি টানে। বাড়াবাড়ি করে এই উবরা যার উপরে পড়বে তার ঠাট বাটের বারোটা বাজবে।”
পাপিয়া অসহায়ের মত ডানে বাঁয়ে তাকায়। কর্মচারী খাবার পরিবেশন করলে বিনা বাক্যব্যয়ে দুজন খেতে শুরু করে। টেটিয়া ডান হাতে খাবারের ব্যাগ ধরে বাম হাতে নেংটি টেনে আড়চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলে পাপিয়া চোখ বুজে শিউরে উঠে। সামী খাবার খেয়ে আধা কুলি পানক গিলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে অস্ফুটস্বরে বলল... "ইয়া আল্লাহ, আমি আপনার উপাসনা করি। উপায়ান্তর হলে কী করতে তা আমি জানি না। আশ্রয় এবং আহার্যের জন্য আমি কখনো দুশ্চিন্তা করিনি। সূর্যাস্তের সময় হচ্ছে, আমার আশ্রয়ের আয়োজন এখনো হয়নি।"
পাপিয়া টিসুতে মুখহাত মুছে অস্পষ্ট শব্দে আলহামদুলিল্লাহ বলে দাঁড়ালে দুজন চোখা-চোখি হয়। পাপিয়া মাথা নত করে লাগেজের উপর হাত ব্যাগ রেখে দরজা টেনে খুলতে ব্যর্থ হলে সামী দরজা খুলে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল... "আপনার পরে আমি বেরোব।”
পাপিয়া হাসার চেষ্টা করে “ধন্যবাদ” বলে কোঁতাকুঁতি করে লাগেজ টেনে বেরোলে সামী মাথা দুলিয়ে স্বগতোক্তি করে… "ধন্যবাদ থেকে বাদ বাদ দিয়ে আকার যোগ করলে ধন্যা সৌভাগ্যশালী হয়ে আমার ঘরে আসলে সত্বর ভাগ্যপরিবর্তন হবে।”
পাপিয়া এক পাশে সরে দাঁড়িয়ে লাগেজের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বর বলল... "স্বস্তি এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যাকে সৌভাগ্যশালী করে ফেলেছে।”

[ ] একে অন্যের অসংলগ্ন কথাবার্তায় কান না দিয়ে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে দেখছিল। দোকানের দেওয়াল-বিজ্ঞাপনে বাসা ভাড়া দেওয়া হবে লিখিত দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যেয়ে হাতে লেখা শর্তাদি পড়ে দুজন হতাশ্বাস হয়। [ ]

সামী পিছু হেঁটে অস্ফুটস্বরে বলল... "সাধু উদ্দেশ্যে সদুপায় হওয়া পর্যন্ত বেচেবর্তে থাকার জন্য আমি এখন বউ পাব কোথায়?”
পাপিয়া বিজ্ঞাপনের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে নিম্নস্বরে বলল... "অভদ্র কোথাকার! জোড়াতাড়া দিয়ে জড়াজড়ি করাবার জন্য তুমি জোড়াজুড়ি খুঁজতে থাকো। ভালোমানুষ জুটি হলে ভালো বাসার ভাড়া ভাগ করব না জুটলে আজীবন ট্রলি ঠেলাব।”
সামী অনতিদূরে দাঁড়িয়ে পাপিয়ার দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে... "এমন সম্মোহক কিছুর সম্মুখীন আমি কখনো হইনি। হয়তো সত্য প্রেমের মুখোমুখি হয়েছি? সত্যাসত্য জানার জন্য সুন্দরীকে প্রশ্ন করে সম্মোহিত হলে সামান্যতম ভুলের জন্য উত্তমরূপে দুরস্ত করবে। শুনেছি সুন্দরীদের নাকের ডগায় রাগ থাকে। অনুরাগী হওয়ার জন্য গায়ে পড়ে ভাব জমাতে চাইলে অত্যহিত হবে। বিরাগে বিপদগ্রস্ত হলে গাছতলে বসে ভেবেচিন্তে স্থিরসিদ্ধান্ত করতে পারবে, আমার মুখ থেকে যুগলমিলনের ভবিষ্যদ্বাণী বেরোলে চর্মপাদুকা ছুড়ে মারবে।”
পাপিয়া আড়চোখে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে... "সেও কি আমার মত ভালো বাসা খুঁজছে, জিজ্ঞেস করব? ধুৎ! দেখতে টেটন মনে হচ্ছে। ওটার মত হলে অঘটন ঘটার পর ঘটনার বিবরণ যে শুনবে সে বিভ্রান্ত হবে।"
সামী অনিমিখে তাকিয়ে পাপিয়ার আপাদমস্তক দেখে মাথা দুলিয়ে নিম্নস্বরে বলল… "গড়ন-গঠনে রূপলাবণ্যবতী। কথার সাথে কাজের সংগতি। হাবভাবে আশ্বস্ত হয়েছি সুন্দরী এখনো কুমারী। আমি বিশ্বাস করি, নিয়তির নিয়ন্ত্রণে নিয়তাত্মা। জুতসই ভাবপ্রকাশে হয়তো হতে পারব একাত্মা।”
পাপিয়া আড়চোখে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে… "তার চোখের দিকে তাকালে আমার অন্তরাত্মা আশ্বস্ত হয়। আচার-আচরণে স্পষ্ট সে নিশ্চয় সংযমী এবং কৃতাত্মা।"
সামী বুক ভরে শ্বাস টেনে নিম্নস্বরে বলল… "ক্ষণস্থায়ী জীবনে কোনোকিছু চিরস্থায়ী নয় জেনেও আমরা এড়িয়ে চলি বালাই। আমি বিশ্বাস করি ওর হাত ধরলে আমার দখলে আসবে ভালাই।”
পাপিয়া চিন্তিত হয়ে অস্ফুটস্বরে বলল… "অপহারকের মত তাকিয়েছে কেন? রোমহর্ষক চোরাচাহনির প্রভাবে ভয় এবং উত্তেজনায় শিরশির করে শিহরিত হয়েছি। চিন্তা চেতনায় অলীক ভাব বাসা বানাচ্ছে। অবেলায় অপহৃত হলে অসহায় হবো। বৃহস্পতির বারবেলায় একী ভেলকি লাগলো?"
সামী বিজ্ঞাপনের দিকে তাকিয়ে কপালে আঘাত করে বলল... "আজেবাজে চিন্তা করতে চাই না আমি এখন বউ পাব কোথায়?"
পাপিয়া রেগে গায়ের জোরে লাগেজ ঠেলে বিরক্ত হয়ে বলল... "ধুত্তোর ছাই! টেনেটুনে আমি এখন কোথায় যাই?”
সামী এদিক-ওদিক তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল... "আমি বাসা ভাড়া করতে চাই আর এই বাসার মালিক নবদম্পতির কাছে বাসা ভাড়া দিতে চায়। আমাকে মারধর করলেও আমি ইদানীং বিয়ে করব না। তাবিজ টোটকা আমি ডরাই।"
পাপিয়া থমকে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে অবাককণ্ঠে বলল... "আমার সাথে কথা বলছেন নাকি?"

ইবুক ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

প্রচ্ছদ

© Mohammed Abdulhaque