কাব্যরসিকা

কল্পনাবিলাসীদের প্রেমকাহিনী

গল্পের নায়ক নায়িকা কাব্যচর্চা করে। নায়িকার নানা প্রতিষ্ঠিত কবি হওয়ার সুবাদে নায়িকা সহজে জনপ্রিয়তা পায়। নায়ক নিজে লেখক এবং প্রকাশক। সম্পদের লোভে নায়কের নিকটাত্মীয় তার স্ত্রীকে হত্যা করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়। নায়িকার মতামত না জেনে চাচা ওকে নিকটাত্মীয়ের কাছে বিয়ে দেন। মানসিকে এবং দৈহিক অত্যাচার করে নায়িকাকে ঘর থেকে বার করে দিলে নায়কের সাথে পরিচয় হয় এবং মেয়েকে লালন পালন করার জন্য নায়িকাকে পরিচারিকার কাজ রাখে। নানার সাথে নায়িকার মুখাবয়ের মিল থাকায় নিশ্চিত হওয়ার নায়ক নানার সাথে দেখে করে এবং পালাক্রমে সত্যাসত্য জানাজানি হওয়ার পর নানা তাদেরকে বিয়ে করিয়ে দেন।

সাহিত্যসাধক নানার সংস্পর্শে থেকে সারণী সাহিত্যসাধনা শিখেছে। জোড়াতাড়ায় ঠেকার কাজ চলে এবং জোড়াশব্দে বিশেষ অর্থবোধ হয় জেনে সাত্ত্বিক হয়েছে। কল্পনাবিলাস এবং কটাক্ষবিলাস শব্দের অর্থ জানার পর থেকে অস্বাভাবিকভাবে ওর হাবভাব বদলেছে। গ্রীষ্মের ছুটি কাটাবার জন্য দেশে আসার পর কাব্যের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কাব্যিক স্বভাবে শাড়ি পরে নানার গ্রামের বাড়িতে হাঁটছিল। নানা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উচ্চকণ্ঠে বললেন… “লাবণ্যচঞ্চল পরমা সুন্দরী, চটকদার হয়েছে ডাকসুন্দরী।”
সারণী নানার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলল… “বিয়ে আরেকখান করতে চাও নাকি?”
নানা হেসে কুটিপাটি হয়ে বললেন… “পরিণতবয়সে বিয়ে করলে শেষ পরিণতি ভালো হয় না। ভোগ বিলাসে খরচ বাড়ে, বিলাসব্যসনে সংসার চলে না।”
সারণী দ্রুত হেঁটে যেয়ে নানার হাতে কিছু দিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল… “পূর্ণতাপ্রাপ্তির জন্য মুখে বুজে ধুস্তুরী চিবাও।”
নানা দুহাত নেড়ে হাসতে হাসতে বললেন… “বাপের জন্মে আমি তোর সুন্দরী ডাকব নাগো ডাকসুন্দরী।”
সারণী মুখ বিকৃত করে বলল… “বুড়ো হলেও অভীকের স্বভাবদোষ যায় না। বুড়োবুড়ি জড়ো হলে মজ্জায় মজ্জায় মিলে সমুজ্জ্বল হয়। লজ্জায় লজ্জিত হয়ে এখন লজেন্স চোষতে হব।”
নানা কপট হেসে বললেন… “এসব অভ‍্যাসমাফিক কার্মকাণ্ড।”
নানি মাথা দুলিয়ে বললেন… “হ্যাঁ! তা স্বভাবসিদ্ধ এবং স্বাভাবিক।”
সারণী আড়চোখে তাকিয়ে বলল… “বেশবিন্যাসে মনে হচ্ছে হাতে স্বর্গের চাবি এবং যখন তখন মোক্ষলাভ হবে। ঠিকাছে! তাই যেন হয়। শুধু এতটকু বলব, একবার নিজের ছায়াকে জিজ্ঞেস করো, স্বর্গোপযোগী কি হয়েছ? ছায়া নিরুত্তর থাকার কারণ, স্রষ্টা সরাসরি সৃষ্টির সাথে কথা বলেন না। কষ্টেসৃষ্টে স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করলে স্বর্গপ্রাপ্তি হয়।”
নানা :.. “ভেবেচিন্তে জেনেছি, ছাগলের সাথে পাগলামি করলে পাগলে তাড়া করে। সকল পাগল স্বর্গে যাবে না, বেশিরভাগ পাগল নমাজ কাজা করে। ছায়াবাজি দেখার জন্য ছায়াতরুর ছায়ে বসে ছায়ার নিগূঢ় রহস্য জেনেছি, ছায়া কখনো সঙ্গ ছাড়ে না। মানুষ লজেন্স চুষতে পছন্দ করে এবং লজ্ঝড় গাড়ি চড়তে না চাইলেও লাফিয়ে বেড়াতে চায়। হায় মানুষ! আমরা অন্যকে মানুষ ডেকে নিজে কী তা ভুলে যাই।”
সারণী :.. “আজ নিশ্চয় অপচ্ছায়ার নিচে বসেছিলেন অথবা অশরীরীর ছায়া মাড়িয়েছেন!”
নানা :.. “ভক্তিবলে অন্তর্ভুক্ত হলেও ভুক্তভোগী ভক্তরা বিরক্ত করে, কাব্যের ভর উঠলে লবেজান কবির ভোগের প্রবৃত্তি বাড়ে।”
সারণী হাঁটতে শুরু করে বলল… “খামোখা চিন্তা করে মন সংশয়গ্রস্ত হয়েছে। মাথার কী যে অবস্থা মুখে বলতে পারব না, স্বস্তির সাথে আশ্বস্ত হওয়ার জন্য আমি আমার কামরায় যাচ্ছি।”
নানা ডান হাত উঁচালে নানি যেয়ে বাজু ধরেন। নানা হাঁটতে শুরু করে বললেন… “মাটির দেহ কখন নিথর হবে তা আমি জানি না। সময়ের সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় হয়েছে। পারানি এখনো জোগাড় করতে পারিনি। আমাদের সাথে আমাদের সংসার বিলীয়মান হবে।”
নানি :.. “আমার মন বেজার হলে মুখ ভেংচিয়ে বলে তুমি অনুপ্ত নও।”
নানা :.. “এত শব্দ কোথায় যে পায়! ওর হাবভাব এবং ভাবপ্রকাশে সত্যি তাজ্জব হই।”
নানি :.. “ওর সাথে কথা বললে আমার বুদ্ধিবৈকল্য হয়। আমরা যা বইয়ে পড়তাম তা বাস্তবে চর্চা করে।”
নানা :.. “তুমি ঠিক বলেছ। সারণী হলো কাব্যগুণে গুণান্বিত কল্পনাবিলাসিনী। ওর মাঝে কাব্যমাধুর্য আছে, কল্পনায় আছে প্রবল শক্তি। ওর অভাবনীয় ভাবপ্রকাশ এবং ভাববাচ্যে সম্মোহিত হই। চমৎকার শব্দ ব্যবহারে চমৎকৃত করে। সাহায্য করলে কাব্যজগতে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।”
নানি কাঁধ ঝুলিয়ে বললেন… “থতমত খেয়ে আমি প্রায় বিস্ময়বিস্ফারিত, আর বিস্মিত হলে যখন তখন ভিরমি খাব।”
নানা হাসতে হাসতে বললেন… “চলো! যেমন করে হয় আজ ওর বুদ্ধিনাশ করব।”
নানি :.. “এখন চেতালে ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরে খামোখা কাটা গায়ে নুন ছিটাবে।”
নানা :.. “নাচাকোঁদা করলেও ঠাণ্ডা মাথায় ডম্বরু বাজিয়ে অক্ষরডম্বর ফাটায়। আজ ওর সাথে এক হাত হবে। প্রয়োজনে নাড়ু হাতে হামাগুড়ি দিয়ে তোমার শরণাপন্ন হব।”
নানি :.. “অপ্রত্যাশিতভাবে ভীষণ বিপদের সম্মুখীন হলে অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপারে আমি মহাব্যস্ত হব।”
নানা :.. “চিন্তার কারণ নেই, সকল সমস্যা আজ একলা সামলাব।”
সারণী উঁকি ঝুঁকি দিয়ে নানাকে আসতে দেখে কবিতা আবৃত্তি করে… “নিশুতি রাতে কোকিলা ডাকে নিরবধি, মনে আছে কত দুঃখ, নির্দয় হয়নি দরদি। স্বপ্নরা প্রায় নিলীয়মান, নির্গন্ধ হচ্ছে নিশিগন্ধা ফুলের কলি, ষড়রিপুরা এখন বিভীষণ, আশা হয়েছে কুহেলী।”

প্রচ্ছদ

তারপর পড়ার জন্য ইবই ডাউনলোড করুন

© Mohammed Abdulhaque

About Me

My name is Mohammed Abdulhaque. I was born in Bangladesh and brought up in England. I left school at sixteen and started to work. In the beginning, it was only a hobby, now it’s like meditation. I love writing, writing keeps me calm. I also like to think about the Creator, who created the earth and the atmosphere. I live in London. Everyone knows that, for Londoners thinking is a luxurious hobby. I am a human, and we make mistakes. For that reason, forgiving is a good deed, and for righteous haven is destiny.

%d bloggers like this: