“মনঃকল্পিত ভালোবাসার গল্প”
উপন্যাসের নায়িকা ধেয়ানচিন্তা করে ইমেইল এড্রেস বানিয়ে তা মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠালে নায়কের আক্কেলগুড়ুম হয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়। ভান ভণিতা এবং অনুনয়ী নায়িকার অনুনয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও নায়ক বার্তা বিনিময় করে এবং মনে মনে প্রণয় অনুপ্রাণন হয়। নায়ক এতিম এবং বিশ্বাস সে অভিশপ্ত। পারতপক্ষে কারো সাথে সে কথা বলে না এবং সাধ্যানুসারে সবার দূরত্ব বজায় রাখে। একদা বাদলসন্ধ্যায় জানালার সামনে দাঁড়িয়ে নায়ক বৃষ্টিবাদলের দৃশ্য উপভোগ করে তখন তার সামনের ভাসার নিবাসিনী বৃষ্টিস্নান করছিল। নিজের অজান্তে সে বৃষ্টিবিলাসিনীর প্রেমে পড়লেও নিজেকে দূরে রাখে। নায়িকাকে সে মানসী ডাকে এবং বার্তা বিনিময়ে মনোব্যথা ভ্যক্ত করে। আশ্চর্যজনকভাবে নায়িকাই বৃষ্টিবিলাসিনী এবং তার সাথে সম্পর্ক গড়তে চায় কিন্তু সে এড়িয়ে চলে। এক বিকালে আড়াল থেকে নায়িকা তার পিঠে বেল ছুড়ে মারলে সে রেগেমেগে আন্দাজে ছুড়ে মারে এবং বেল মাথায় পড়ে নায়িকা আহত হয়। কে ঢিল মেরেছিল জানান জন্য বাবা যেয়ে তার সাথে পরিচিত হয়ে তাকে সাথে নিয়ে যান। নায়িকা নায়কের সাথে কথা বলার জন্য ফোন করলে তার মোবাইল বাজে এবং নায়িকা বিস্মায়াভিভূত হলেও আনন্দিত হয়। রাতে মাথার ব্যথা বাড়লে নায়িকাকে নিয়ে হাসপাতালে যান, তা দেখে নায়াক নিজেকে তিরষ্কার করে নিরুদ্দিষ্ট হলে নায়িকা তাকে খুঁজে বার করে এবং তাদের বিয়ে হয়। মনের মানুষ মনোমতো হলে মন তার হাত ধরতে চায়, তার সাথে হাঁটতে চায়, চায় তার সাথে সংসার করতে। মন মনের মানুষকে খুঁজে বার করতে পারে এবং মনের মানুষ যে সত্যি মনে থাকে তা থেকে এই উপন্যাস।
আকাশ ঝামরিয়ে পরিবেশ মেঘাচ্ছন্ন হলেও বনবাদাড়ে বসন্তোৎসব। লীলাচঞ্চলে পুষ্পসুবাস। পরিযায়ী পাখিরা তামাবিলে নেমে জলকেলি করছিল। ছাদের উপর দাঁড়িয়ে তুহিন গুনগুন করে চারপাশে তাকাচ্ছিল। আশেপাশে লোকজন নেই। চোখ বুজে গানে টান দেবে এমন সময় মেঘডম্বর ফেটে তামাবিলে বাজ পড়ে ছ্যাঁৎ করে উঠলে পাখিরা উড়াউড়ি করে। তুহিন বুকে থু থু দিয়ে মাথা তুলে সামনের বাসার দিকে তাকায়। সালোয়ার কামিজ পরিহিত যুবতী তড়বড় করে গাড়ি থেকে নেমে ভোঁ দৌড়ে বাসায় প্রবেশ করার সাথে সাথে ঝিরঝিরে বৃষ্টি অঝোরধারে ঝরে, যেন একবারের বর্ষণে বান ডাকবে। ঠাঠার ডরে দাঁত কটকট করে তুহিন দৌড় দিতে চেয়ে সামনের বাসার ছাদের দিকে তাকিয়ে নিম্নকন্ঠে বললো, “বৃষ্টিবিলাসিনী নিশ্চয় অলোকসুন্দরী?” যুবতী তখন ছাদে উঠে দু হাত মেলে মনোল্লাসে বৃষ্টিস্নান করছিল। বৃষ্টিসজল উজ্জ্বলাকে দেখে কাব্যরসিকের মতো ভাববোলাকণ্ঠে কবিতাবৃত্তি করে… “বৃষ্টিতে ভিজে জেল্লাময়ী পরিপার্শ্বে কামানল জ্বালিয়েছে। বৃষ্টিভেজা বিতনুকে দেখে মিনমিনে মন চনচনে হতে চাইছে। হে বৃষ্টিবিলাসিনী! তোমাকে বাহুতে পাওয়ার জন্য আমি অপেক্ষমাণ। বরণ করলে অবিস্মরণীয় হবে বর্ষণমুখর বাদলসন্ধ্যা।” তার মনের কথা মানসীর কানে না পৌঁছে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দে অস্পষ্ট হয়। আনন্দোদ্ভাসিত বৃষ্টিবিলাসিনীর প্রাণবন্ত চাঞ্চল্যে তুহিন জীবনীশক্তির সন্ধান পেয়ে আনন্দবিহ্বল হয়ে অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। অবিরলপাতে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করলে বৃষ্টি এবং বৃষ্টিবিলাসিনীকে ধন্যবাদ বলে সে দ্রুত নেমে গোসলখানায় প্রবেশ করে এবং মাথা ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বেরিয়ে নিম্নকন্ঠে বললো, “আটানব্বই টাকায় আটান্নটা ঘোঁটনকাঠি কিনেছিলাম, আটাত্তরটা বরাদ্দ করলে আঠাকাঠিতে ঠাঠা পড়েছিল। এখন ঠাঠা গরম চায় চুমুক দিতে হবে নইলে সারারাত দাঁত কটকট করবে।” এমন সময় বার কয়েক বিজলি চমকালে আনন্দোচ্ছল যুবতী সন্ত্রস্তা হয়। তুহিন শুকনো কাপড় পরে আস্তেধীরে হেঁটে জানালার পাশে যায় এবং দু হাতে কপাট খুলে চৌকাঠে ঠেক দিয়ে সামনের বাসার দিকে তাকায়। বৃষ্টিবিলাসিনী তখনও বৃষ্টিস্নান করছিল। তুহিন মৃদু হেসে শিউরে হাতে হাত মলে দু হাতে মুখ ঢেকে হাঁচি দিয়ে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে আরো কয়েকটা হাঁচি দিয়ে ডান হাতে নাক ঘষে এবং আরো হাঁচি আসতে চাইলে কাঁধ ঝুলিয়ে হতাশকণ্ঠে বললো, “এ কী সর্বনাশ করেছি?” চা’র কাপ হাতে বৃদ্ধা প্রবেশ করে বললো, “সাহেব, আপনার চা। রাতের রান্না সেরেছি। আমি এখন চলে যাব।” কাপ হাতে নিয়ে সামনের বাসার দিকে তাকিয়ে তুহিন বললো, “অমনি অথবা শূন্য হাতে কুটুমবাড়ি গেলে ভূতে কিলায়। অমন করে কেউ অমনি অমনি কথা বলে না। বিমনা হলেও মন অমনি বিক্রীত হয় না। ঢিল না মারলে গাছ থেকে বেল অমনি মাথায় পড়ে না।” বৃদ্ধা কপাল কুঁচকে বললো, “সাহেব, মাঘের মেঘে ভিজে এমনি অমনি কথা বলছেন কেন?” তুহিন বুক ভরে শ্বাস টেনে বললো, “অমৎসর হতে চাই আমি জানি আমার মনে অমতি। বরাবর বারোটায় রোজ বারবেলা শুরু হয়। ঘরেবারে হাঁটি আমি আত্মার আত্মিয়ার দেখা না পাই। মিনমিনে মন যাকে দেখে চনচনে হয়েছে তার সাথে মন বিনিময় করতে চাই।” “সাহেব, আজ আপনার কী হয়েছে?” “আম্মা!” বলে চিৎকার করে তুহিন কান পেতে বললো, “সোনাসংসার আজাড় হলে মধুর বুলি ভীষণ শব্দে প্রতিধ্বনিত হয়। পরিবেশ নিস্তব্ধ হলে আমার কলিজাকে ধুনখারা বানিয়ে কে যেন তুলা ধুনে। ধুনুরিকে আমি কখনো দেখিনি। কোথাও শান্তি নেই। শান্তি এবং স্বস্তির জন্য আত্মার আত্মিয়ার পাশে বসে খোশগল্প করতে চাই।” “সাহেব, আপনি জানেন আপনার সব কথা আমি বুঝি না।” “একে একে সবাই অমরাবতী চলে গিয়েছেন। শুধু আমি অবশিষ্ট, নীরবে নিপীড়িত এবং নিষ্পেষিত হওয়ার জন্য।” “সাহেব, একটা কথা বলি, দয়া করে রাগবেন না।” “ঠিকাছে রাগব না।” “বিয়ে করছেন না কেন?”
তারপর পড়ার জন্য ইবই ডাউনলোড করুন

You must be logged in to post a comment.