পূর্বরাগ

ভাবগম্ভীর ভালোবাসার গল্প

ধীরোদ্ধত নায়ক প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির একমাত্র সন্তান। বাবার পছন্দের পাত্রীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে অসম্মত হলে রাগের মাথায় বাবা তাকে ত্যাজ্য করেন এবং স্বপ্নাদেশ পেয়ে সে শহরে যায়। রিকশা চালকের কাছে সাহায্য চাইলে, চালক তাকে শহরের এক প্রান্তে নিয়ে যায়। সে বাসার মালিকের স্ত্রী সন্তানকে আত্মিয়রা পরিকল্পিতভাবে হত্য করেছিল। সব জেনে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য নায়ক বাসার মালিকের পালকপুত্র হতে চাইলে উনি বারণ করেন। পরে নায়িকার বাবার সাথে দেখা হয়। বারো কেজি ওজনের তরমুজ কিনে উনি বিপাকে পড়লে সে বহন করে বাসায় পৌঁছে দেয় এবং কথায় কথায় কামরা ভাড়া করতে চায় বললে, উনি তাকে এক কামরা ভাড়া দেন। পরে নায়িকার সাথে পরিচিত হয় এবং তাদের বিয়ের পর বেড়াতে বেরিয়ে তার বাবার সাথে দেখা হয়। তার বাবা বুকের ব্যথায় আক্রন্ত হলে সে দৌড়ে যেয়ে বাবাকে ধরে এবং বাবা ভুল স্বীকার করে তাকে বাড়ি নিয়ে যান এবং সবার সাথে মিলেমিশে জীবনযাপন করে।
বিকেলের ফুরফুরে বাতাস এবং পাখপাখালির ডাকে বাগান মুখরিত। নামী দামি গাড়ি ঐশ্বর্যমণ্ডিত প্রাসাদের সামনে থামে। দারোয়ান গেট খুলে দিলে ফটক পেরিয়ে দর-দালানের সামনে গাড়ি থামিয়ে চালক দ্রুত বেরিয়ে পিছনের দরজা খুলে পিছু হটে। ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা বেরিয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে কাপড় ঠিকঠাক করেন। সামনের সিটে বসা পেশিবহুল সুদর্শন যুবক বেরোচ্ছে না দেখে ভদ্রলোক গম্ভীরকণ্ঠে ডেকে বললেন… "আবির, আজ যাকে দেখেছি তার সাথে তোর বিয়ে হবে।"
আবির গড়িমসি করে গাড়ি থেকে বেরিয়ে ডান হাতের নখের দিকে তাকিয়ে বলল... "আমি ওকে বিয়ে করব না।"
"কী বললে?" বলে ভদ্রলোক গর্জে উঠলে, ভদ্রমহিলা চমকে ডানে বাঁয়ে তাকান। চালক ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। দারোয়ান অদৃশ্য বিপদের জন্য প্রস্তুত হয়। আবির বুক ভরে শ্বাস টেনে দৃঢ়কণ্ঠে বলল... "আপনি আদেশ করলে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকব। কুস্বভাবার সাথে উঠা বসা করতে পারব না।”
ভদ্রলোক হাত দিয়ে ইশারা করে রাগান্বিতকণ্ঠে বললেন… "আমার বাড়ি থেকে এখুনি বেরিয়ে যা। আমি তোকে ত্যাজ্য করলাম।"
আবির মৃদু হেসে মা’র দিকে তাকায়। মা মুখ ফিরালে আর কারো দিকে না তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস টেনে হাঁটতে শুরু করে। তার হাবভাবের প্রভাবে গাছগাছালি ঝিম ধরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ঘোরবর্ষণ শুরু হলে সে দৌড়ে বাগান বাড়ি যায়। মেঘ কেটে আকাশ পরিস্কার হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়। পুকুর পারের হিজল গাছের ডালে বসা পাখিদের ডাক এবং পাতায় জমা বৃষ্টিজলের ফোঁটা পুকুরে পড়ে মোহতিমির পরিবেশে ভাবাবেশ সৃষ্টি করে। বৃষ্টিজলের টাপুরটুপুর এবং বাতাসের শন-শন শব্দের সাথে সুর মিলিয়ে গুনগুন করে হাঁটে। রাত হলে কয়েক আঁজলা পানি পান করে কাঁচুমাচু হয়ে শুয়ে গভীর ঘুমে স্বপ্ন দেখে মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে বলছেন, "ভবঘুরের মত ঘোরাঘুরি না করে শহরে চলে যা। সেখান থেকে তোর সংসারজীবন শুরু হবে।”
স্বপ্নাদেশ পেয়ে ধড়মড় করে উঠে দুহাত বাজুতে ঘেষে শিউরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে দেখছিল। এমন সময় কেউ তার নাম ধরে ডেকে বলল... "আবির! কোথায় যাচ্ছিস?"
আবির তার দিকে তাকিয়ে অবাক কণ্ঠে বলল... "সুরব, সাতসকালে এসেছিস কেন?"
সুরব :.. “তোর সাথে দেখা করার জন্য রাত থাকতে বেরিয়েছিলাম। তোর কী হয়েছে, আজ এত মনমরা কেন?"
আবির :.. “আব্বা আমাকে ত্যাজ্য করেছেন, তাই আমি পরিব্রাজক হয়েছি।”
সুরব :.. “কী বলছিস এসব! চাচা তোকে ত্যাজ্য করবেন কেন?”
আবির :.. "এতদিন আত্মভোলা ছিলাম, এখন থেকে দিগ্ভোলা হব। মন যেদিকে যেতে চাইবে সেদিকে যাব। তুই চলে যা।"
সুরব :.. “অজ্ঞাত কারণে আমার বুকের ভিতর ধকধক করছিল, তাই ভোর না হতেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। অনেকদিন হয় পুকুর পারে আড্ডা গেড়ে বড়ুই গাছের দিকে তাকিয়ে মাথা চাপড়াইনি। বিচি ছেঁদে জপমালা বানাবার জন্য আজ অন্তত একটা বড়ুই খেয়ে শেষ করতে চাই।”
আবির :.. “গগনস্পর্শী আশা নিয়ে প্রয়োজনে গাছতলে ঘুমাব তবু আমি বাড়ি যাব না। বাড়াবাড়ি না করে তুই ফিরে যা।”
সুরব :.. “ঠিকাছে, আমি তোকে বাড়ি যাওয়ার জন্য বলব না, শুধু জানতে চাইব তুই এমন কী করেছিলে যার জন্য চাচা তোকে ত্যাজ্য করেছেন।”
আবির :.. "বড়লাটের মাথামোটা মেয়েকে ঘরের বউ বানাতে চেয়েছিলেন। ওই যে দিগম্বরের মতো ঘটঘট করে হাঁটে, ওটার সাথে গাঁটছড়া বেঁধে দিতে চেয়েছিলেন।"
সুরব :.. "যা হওয়ার হয়েছে তা বাদ দিয়ে আমার সাথে চল। রাগের মাথায় চাচা তোকে ত্যাজ্য করেছেন। খাবার টেবিলে বসে তোকে না দেখলে উনার হাত-পা পাথর হবে। আমি বিশ্বাসের সাথে বলতে পারব, চাচা কখনো হাত-পা বেঁধে তোকে জলে ফেলবেন না।”
আবির :.. “আমার দিকে তাকিয়ে দেখ, সাত বাঘে খেয়ে শেষ করতে পারবে না। আমি আর গতর পোষতে চাই না। এখন থেকে গতর খাটিয়ে কাজ করে পেট ভরে ভাত খাব।”
সুরব :.. “আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য চরমপন্থী হতে চাস কেন?”
প্রচ্ছদ

ইবুক ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

© Mohammed Abdulhaque

About Me

My name is Mohammed Abdulhaque. I was born in Bangladesh and brought up in England. I left school at sixteen and started to work. In the beginning, it was only a hobby, now it’s like meditation. I love writing, writing keeps me calm. I also like to think about the Creator, who created the earth and the atmosphere. I live in London. Everyone knows that, for Londoners thinking is a luxurious hobby. I am a human, and we make mistakes. For that reason, forgiving is a good deed, and for righteous haven is destiny.

%d bloggers like this: