সত্য প্রেম

ভালোবাসার উপন্যাস

কিংবদন্তি হলেও রত্নবনিকরা বিশ্বাস করে নীলগিরির কন্দরে অগণিত নীলকান্তমণি আছে। সেই গিরি ওড়িশার পর্বতমালায় না দেশের পার্বত্যাঞ্চলে জানার জন্য যে অনুসন্ধানী হয় তার নাম আনীল।
সহজলভ্য উপরত্ন এবং দুর্লভ রত্নালংকারের প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে অত্যন্ত আকর্ষক সংগ্রাহিকার কণ্ঠহারের মধ্যমণি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার হাবভাব এবং দেহ সৌষ্ঠবে সংগ্রাহিকা আকৃষ্ট হলে কথোপকথনে বিপত্তি বাড়ে। পৃথিবী ঘুরে নবরত্ন সংগ্রহ করা তাদের নেশা এবং পেশা। ভালোবাসা উপভোগ করার জন্য সংসারজীবনে প্রবেশ করা তাদের জন্য অলীক কল্পনা মাত্র। আনীল তা বুঝতে পেরে গুপ্তধনের গূঢ়তত্ত্ব জানার জন্য দেশের নিগূঢ়তম প্রদেশে অদৃশ্য হওয়ার বাইশ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গাড়ি থামিয়ে ছাত্রছাত্রীকে পর্যবেক্ষণ করছিল।

অনিল নামক যুবক ডাকসুন্দরীর মুখোমুখি হয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে পিছলে পড়লে আনীল অন্তহাসি হেসে গাড়ি চালাতে শুরু করে এবং বাতাসে গানের সুর ভাসে…

“বেলেপাথরে বালি থাকে, অস্ত্রাদি ধার হয় কোষ্টিপাথরে শান দিলে, লোহা সোনা হয় পরশপাথর স্পর্শ করলে, নকল সোনা ধরা পড়ে কষ্টিপাথরে ঘষা লাগলে।”

পরদিন থেকে গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অনিল ঐতিহাসিক ভদ্রলোক সেজে গ্রামে যায়। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে টোনাটুনির টুনটুন শুনে মনের আনচান দূর করার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল।

দাদি ডেকে বললেন... “অনিল! পাকঘরে আয়, আমার সাথে নাস্তা খাবে।"
অনিল উচ্চস্বরে সাড়া দিয়ে দৌড়ে যেয়ে অবাককণ্ঠে বলল... "দাদিজান, আমাদের পাড়ায় নুরি আসলো কোথা থেকে?"
দাদি :.. “উত্তর পাড়ার নুরির কথা বলছিস নাকি? হয়তো তোকে দেখার জন্য এসেছে। তোর পছন্দ হলে এখুনি বিয়ের প্রস্তাব করব।"
অনিল :.. "ইয়া আল্লাহ আমাকে তরাও! বোকার মত বকবক করে আজ আমি বিপাকে পড়েছি।"
দাদি বিদ্রূপ হেসে বললেন… "বেপাড়ায় মস্তানি করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় এবং বাসি খাবারে স্বাস্থ্যহানি হয়। আমার কথা মনে থাকে যেন।”

অনিল আর কথা না বলে চার আনা তিন সিকি মানত করে নাস্তা খেয়ে বেড়াতে বেরোয়। বন বাগানে কাঁচপোকারা ভনভন করছিল, বভ্রু ফুলের সাথে ভ্রমরী ভাব জামাচ্ছিল। প্রাকৃতিক পরিবেশে কত জীবনীশক্তি আছে তা অনুভব করতে হলে বাতাসে মন ভাসাতে হয়। অনিল তাই করছিল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে হাঁটছিল। পাড়াকুঁদুলি নুরি তখন তাইরে নাইরে করে নেচে বেড়াচ্ছিল। দুজন চোখাচোখি হলে নুরি হেঁকে ডেকে বলল... "বাতাস বন্ধু! এক কাহনে কয় কড়ি বলতে পারলে আমি তোকে বিয়ে করব না।”
অনিল উঠে পড়ে দৌড়াতে চাইলে নুরি খিল খিল করে হেসে বলল… "উত্তর ভুল হলে বাসর-ঘরে ঠিকঠাক করব।"
অনিল কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে স্বগতোক্তি করে… "কার্ষাপণের অর্থ ষোলো পণ এবং পণে কুড়ি গণ্ডা হলে কাহনে হবে বারোশো আশি কড়ি।”
নুরি আঁচল নাচিয়ে হাঁটতে শুরু করে বলল… "বাতাস বন্ধু! আমার বাগিচায় আয় নিম্বুর ফুলে মালা গেঁথে তোর গলায় পরাব।"
অনিল গাছের দিকে তাকিয়ে বলল... "নালিতা শাক পুষ্টিবর্ধক এবং পর্ণাহারে নিরামিষাশী পরিপুষ্ট হলে পর্ণিকরা রত্নবনিক হতে পারে না কেন?"
নুরি :.. “রত্নবনিক হতে হলে মাত্রাধিক যত্নশীল হতে হয়। পর্ণিকরা আঁতুপুঁতু মোটেই পছন্দ করে না। আমার সাথে আয়, তোর হাত ধরে হাঁটতে চাই।”
অনিল :.. “তত্ত্বানুসন্ধানে সমাজতাত্ত্বিক হতে না পারলেও প্রত্নতাত্ত্বিক হওয়া যায় এবং আপখোরাকির জন্য স্বার্থান্বেষীরা তক্কেতক্কে ঘুরায় জানার পর থেকে তার্কিক হয়েছি। তুই চাইলে তর্ক করতে পারবে।”
নুরি :.. “তুই না জানলেও আমি জানি, সতর্ক থাকলে তর্ক করতে হয় না। অন্তর্কলহে শান্তি নষ্ট হলে যুক্তিতর্কে আপোশনিষ্পত্তি হয় না।”
অনিল ডান হাত চোখের সামনে নিয়ে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে বলল... "জলে চাঁদ ঝিকমিক করে, ঝিঁঝি পোকার ডাকে মাথা ঝিমঝিম করে। ঠায় দাঁড়ালে হাত পা ঝিনঝিন করে, ঝিরঝিরে বাতাসে মন ফুরফুরে হলেও রিমিকি-ঝিমিকি শব্দে জান চমকে, যদি মাথায় ঠাঠা পড়ে?"
নুরি হাতের ইশারায় ডেকে বলল… "দৌড়ে আমার উরে আয়, আমি তোকে দাদুর মতো আদর করতে চাই।”
অনিল হাঁটতে শুরু করে ধমকে বলল… "দূর যা!”
নুরি তালে বৈতালে গান গায়… "ঘোরাল রাতে কোরাল মাছ ধরা পড়ে, নিরন্তরালে ঝাঁকে ঝাঁকে করাল পাখি উড়ে। দৌড়ে আয়!”
অনিল কপাল কুঁচকে বলল... "আমাকে কিছু বলছিস নাকি?"

তারপর পড়ার জন্য ইবই ডাউনলোড করুন

প্রচ্ছদ

© Mohammed Abdulhaque

About Me

My name is Mohammed Abdulhaque. I was born in Bangladesh and brought up in England. I left school at sixteen and started to work. In the beginning, it was only a hobby, now it’s like meditation. I love writing, writing keeps me calm. I also like to think about the Creator, who created the earth and the atmosphere. I live in London. Everyone knows that, for Londoners thinking is a luxurious hobby. I am a human, and we make mistakes. For that reason, forgiving is a good deed, and for righteous haven is destiny.

%d bloggers like this: